ভোলা জেলার পরিচিতি

0
2006

ভোলা (bhola) জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর পূর্বের নাম দক্ষিণ শাহবাজপুর। বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলা। জেলা প্রশাসন যাকে কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করে। ভোলা জেলার উত্তরে বরিশাল জেলা ও মেঘনা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা ও মেঘনা নদী এবং পশ্চিমে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা ও তেঁতুলিয়া নদী। এর মোট আয়তন ৩৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার

ভোলা জেলার পটভূমি

ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। ভোলা, জেলা হিসেবে  স্বীকৃতি পায়  ১৯৮৪ সালে।পূর্বে এটি নোয়াখালী জেলার অধিনে sub division ছিল। নোয়াখালী জেলার অধিনে sub division হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল ১৮৪৫ সালে। তখন এর প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল বর্তমান দৌলতখানে। ১৮৬৯ সালে sub division হিসেবে বরিশাল জেলার অধিনে যুক্ত হয় । পরবর্তীতে ১৮৭৬ সালে প্রশাসনিক কেন্দ্র দৌলতখান থেকে ভোলায় স্থানান্তর হয়। বর্তমান ভোলা জেলাতে ৭ টি উপজেলা, ৬৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে। ভোলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে । ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা । একসময় এটা পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার চলত। থুব বুড়ো এক মাঝি খেয়া নৌকার নৌকার সাহায্যে লোকজনকে পারাপারের কাজ করতো। তার নাম ছিল ভোলা গাজি পাটনি । আজকের যোগীর ঘোলের কাছেই তার আস্তানা ছিল । এই ভোলা গাজির নামানুসারেই একসময় নামকরণ হয় ভোলা ।

ভোলা জেলার ইতিবৃত্ত

গাঙ্গেয় অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত দেশের একমাত্র দ্বীপ ভোলা । বর্তমান ভোলা একদা বৃহত্তর বরিশাল জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৮৫৪ সালে দ্বীপটি মহকুমায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলার মর্যাদা পায়। ভোলার আদি নাম ছিল দক্ষিণ শাহবাজপুর। চারদিকে নদী পরিবেষ্টিত এ জনপদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আবহমান বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই। এলাকার কিংবদমত্মী, মসজিদ মন্দিরের স্থাপত্য ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শণ বিশে­ষণ করলে অনুমিত হয় এ জনপদ মাত্র ৭/৮ শত বছর আগে সভ্যতার আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। মহারাজা কন্দর্প নারায়ণের কণ্যা বিদ্যাসুন্দরী ও কমলা রাণীর দিঘির ইতিহাস এ অঞ্চলের লোক সংস্কৃতির একটি অংশ। এ দিঘির কাহিনী নিয়ে সুদুর তামিলনাড়ুর নিম্নাঞ্চলে এখনও গান পরিবেশিত হয়। মেঘনা, তেঁতুলিয়া বিধৌত বঙ্গোপসাগরের উপকুলে জেগে ওঠা প্রায় ৯০ মাইল দৈর্ঘ্য ও ২৫ মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট এ ভূখন্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যেদিকে চোখ যায় সব দিকে শুধু সমতল ভূমি।  ফসলের দোলায়মান দিগমত্ম বিসত্মৃত মাঠ দেখে মানুষের মনে জেগে ওঠে বাউলের গান ও রাখালের বাঁশীতে ভর করে মোহনীয় সুর। প্রাকৃতিক সুষমামন্ডিত এ এলাকার গাছ গাছালী, পাখীর কুজন বারমাসী ফলমূল সত্যিই উলেস্নখযোগ্য।

হিমালয় থেকে নেমে আসা ৩টি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দিয়ে মোহনায় গড়ে উঠেছে এ দ্বীপ। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ১২ ফুটের মতো। নৃ-তত্ত্ব ও ভূ-তত্ত্ববিদরা মনে করেন ‘‘পূর্ব দিকে মেঘনা ও পশ্চিম দিকে তেঁতুলিয়া নদী বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এসে গতিবেগ হারিয়ে ফেলে। ফলে এ শামত্ম স্থানটিতে কালক্রমে পলি ও নদীতে বয়ে আসা বর্জ্য জমা হয়ে আজকের ভোলা নামক দ্বীপটির জন্ম।’’

ভোলার (bhola) জন্ম খুব বেশি দিনের নয়। আনুমানিক ১২৩৫ সালের দিকে দ্বীপটি গড়ে ওঠতে শুরম্ন করে। এখানে প্রথম চর পড়া শুরম্ন হয় ১২৩৫ সালের দিকে এবং ১৩০০সালের দিকে চাষাবাদ শুরম্ন হয় বলে জে. সি. জ্যাক বাকেরগঞ্জ গেজেটিয়ারে উলেস্ন­খ করেন। এলাকার ধান, চাল, সুপারি, নারিকেল ও অন্যান্য প্রাচুর্যে প্রলুব্দ হয়ে একের পর এক বিদেশী শাসক ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা এসেছে এখানে। ১৫০০ সালের দিকে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের নজর পড়ে এ দ্বীপটির ওপর। তারা দ্বীপটিকে ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে লুটপাট চালিয়ে যেতে থাকে। এছাড়াও আরাকানের বর্গি ও মগরা দক্ষিণ শাহবাজপুরসহ আশেপাশের দ্বীপকে ঘাটি বানিয়ে লুটপাট চালিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করে রাখত। এরই প্রেক্ষাপটে সম্ভবত রচিত হয়েছিল

‘‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিব কিসে ?

ধান ফুরালো পান ফুরালো খাজনার উপায় কি ? আর কটা দিন সবুর কর রসূন বুনেছি’’-

১৫১৭ সালে জন ডি সিলবেরা নামক জনৈক পর্তুগীজ জলদস্যু দ্বীপটি দখল করে। পর্তুগীজদের রেখে যাওয়া ভীম দর্শণ কিছু রোমশ কুকুর আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে সেসব লোমহর্ষক অত্যাচারের কাহীনি স্মরণ করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য মনপুরা ছিল এদের দস্যুবৃত্তির লীলাক্ষেত্র।

১৮ শতকে দক্ষিণ শাহবাজপুরের আয়তন ছিল মাত্র ২৫২ বর্গমাইল। ১৮২২সাল পর্যমত্ম শাহবাজপুর ছিল বাকেরগঞ্জ জেলার অংশ। উনিশ শতকের প্রথমভাগে মেঘনার শাখা ইলিশা ও তেঁতুলিয়া বৃহত্তর আকার ধারণ করে। ফলে ভয়ংকর কালাবঁদর নদী পাড়ি দিয়ে নৌকা পথে জেলা সদর দফতরের সাথে দক্ষিণ শাহবাজপুরের যোগাযোগ রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই সরকার সিদ্বামত্ম নেয় বাকেরগঞ্জ হতে দক্ষিণ শাহবাজপুর ও হাতিয়াকে নোয়াখালীর অমর্ত্মভূক্ত করার। ১৮২২ সালের ২২ এপ্রিল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দক্ষি শাহবাজপুরকে নোয়াখালীর অমর্ত্মভূক্ত করার সুপারিশ করেন এবং ঐ বছর ৩ জুলাই নোয়াখালীর জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট এইচ, পারকার দক্ষিণ শাহবাজপুরের দায়িতব বুঝে নেন। ১৮৬৯ সাল পর্যমত্ম ভোলা নোয়াখালীর অধীনে ছিল।

ভোলা (bhola) জেলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। ভোলা শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার  মতো অপ্রশসত্ম ছিলনা। একসময় এটি পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার চলতো। খুব বুড়ো এক মাঝি এখানে খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজন পারাপার করতো। তার নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনী। আজকের যোগীরঘোলের কাছেই তার আসত্মানা ছিল। এই ভোলা গাজীর নামানুসারেই এক সময় স্থানটির নাম হয় ভোলা। ভোলার অন্যান্য উপজেলাও বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হয় যেমন দৌলতখাঁ, তজুমুদ্দি, বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন।

প্রাকৃতিক অনেক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েও ভোলাবাসী এখনও আশার আলো দেখতে চায়। এ নৈস্বর্গিক দ্বীপ ভোলা জেলায় মূল্যবান প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ শুধু জেলাবাসীর জন্যই নয় সমগ্র দেশের জন্য আশানুরূপ সুফল বয়ে আনার প্রত্যাশা রাখে। এ জেলায় উৎপাদিত রূপালী ইলিশ ভোলা বাসীর চাহিদা পূর্ণ করে দেশের অন্যান্য জেলায় এমনকি বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সপ্তম হয়েছে। চরফ্যাশন,তজুমুদ্দিনসহ অন্যান্য উপজেলায় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ি চাষের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেক মৎস্য চাষী মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের সুফল বয়ে এনেছেন। বোরহানউদ্দিন উপজেলায় প্রাপ্ত গ্যাস সম্পদকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উত্তোলনের মাধ্যমে গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে গ্যাসের আওতায় এনে এখানে স্থাপন করা যায় একটি সার কারখানা। এছাড়াও এ গ্যাস দিয়ে ০২ টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র  স্থাপন করা হয়েছেঃ ০১। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টঃ ৩৪.৫ মেঘাওয়াট এবং ০২। বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ ২২৫ মেঘাওয়াট। এছাড়াও রয়েছে ভোলার দক্ষিণে চর কুকরী মুকরী, ঢালচর, লতার চর ও চর নিজাম সহ অসংখ্য চর। নৈসর্গিক দৃশ্য সম্বলিত এ চরগুলো হতে পারে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।

সমস্যা ও সম্ভাবনার বেদীমূলে দাঁড়িয়ে আজকের ভোলা তাকিয়ে আছে সামনের পানে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত ও রূপালী ইলিশ সমৃদ্ধ হলেও ঝড়-জ্বলোচ্ছাস ও নদী ভাঙ্গনের তান্ডবকে নিয়তির অমোঘ বিধান বলে মেনে নিয়েছে এখানকার মানুষ। তাই বলে তারা থেমে থাকেনি। একটি সুন্দর ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা অবিশ্রান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে সম্মুখের পানে।

ভোলার জনসংখ্যা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভোলা জেলার মোট জনসংখ্যা এর মধ্যে পুরুষ ৮,৮৪,০৬৯ জন এবং মহিলা ৮,৯২,৭২৬ জন। মোট পরিবার ৩,৭২,৭২৩টি।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

bhola

ভোলা জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

ভোলার উপজেলা

  • ভোলা সদর উপজেলা
  • তজুমদ্দিন উপজেলা
  • দৌলতখান উপজেলা
  • বোরহানউদ্দিন উপজেলা
  • মনপুরা উপজেলা
  • লালমোহন উপজেলা
  • চরফ্যাশন উপজেলা

ভোলা জেলার ঐতিহ্য

ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। এখানকার সংস্কৃতিতে রয়েছে মিশ্র প্রভাব। ভোলার মেঘনা তেতুলিয়ার তীর ঘেষে রয়েছে ছোট ছোট জেলে পল্লী। মাছ ধরা মৌসুমকে সামনে রেখে পল্লীর মহিলা ও শিশু কিশোররা পালাগান গেয়ে রং বেরংয়ের সুতা দিয়ে জাল বোনে। এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এসব জাল টানানো হয়। তখন বাড়িতে বাড়িতে চলে উৎসব।

এখানে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও অনেক জমিদার বাড়ি সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। যেমন- মানিকা মিয়া বাড়ি, কুতুবা মিয়া বাড়ি, দেউলা তালুকদার বাড়ি, পরান তালুকদার বাড়ি, রজনী করের বাড়ি ইত্যাদি। তবে দৌলতখানের জমিদার কালা রায়ের বাড়ি ছিল বিখ্যাত। তার প্রাসাদে হতো বাইজী ও ক্লাসিকাল ঢঙের ওস্তাদদের গান। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এ বাড়ি। এছাড়া জাগ্রত মাজার হচ্ছে হযরত উজির চান করনীর মাজার।

ভোলার ঘুইঙ্গার হাটের মিষ্টি ও ঘোষের দধির সুনাম দীর্ঘকাল ধরে। অতিথি আপ্যায়ন ও জামাই আপ্যায়নে ভোলাবাসীর প্রথম পছন্দ এ দধি ও মিষ্টি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ মিষ্টি ও দধি উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হয়।

ভোলায় (bhola) এককালে লবণ তৈরি হতো। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খাল দিয়ে ভোলায় অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে লবণাক্ত পানি আটকিয়ে আগুনে জ্বাল দিয়ে লবণ তৈরি করা হতো। অধিকাংশ লবণ তখন তজুমদ্দিন, মির্জাকালুতে বিক্রি হতো। ব্রিটিশ সরকার লবণ কর বৃদ্ধি ও নানা বিধি-নিষেধ আরাপ করায় ১৯৩০ সালে ভোলায় লবণ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩০ সালের ১লা বৈশাখ পুলিশের গুলিতে ২জন মারাও যায়। পরে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও সে স্মৃতি আজো অম্লান হয়ে আছে।

ভোলা (bhola) একটি গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভোলা শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে। এ গ্যাস দিয়ে ভোলার চাহিদা মিটিয়েও বাইরে পাঠানো যায়। এ গ্যাস দিয়ে ইতোমধ্যেই একটি সার কারখানা স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভোলা (bhola) মহিষের বাথানের জন্য বিখ্যাত। ভোলার বিভিন্ন চরে অর্ধশতাধিক মহিষের বাথান আছে। এসব বাথান থেকে প্রতিদিন শত শত কেজি দুধ উৎপাদিত হয় এবং এ দুধ থেকেই তৈরি হয় বিখ্যাত মহিষের দধি, পনির ও ঘি। এসব ভোলার বাইরে পাঠানো হয় বিক্রির জন্য।

ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা ছিল পর্তুগীজ দস্যুদের দখলে। পরে এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন বসতি স্থাপন করে। এখানে কান লম্বা, কেশর ভরা বিখ্যাত জাতের কুকুর ছিল। এখন বিলুপ্ত প্রায়। এখানে পর্তুগীজের তৈরি করা প্যাগোডার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে।

এখানে গ্রামাঞ্চলে দাড়িয়াপাল্লা, ফুটবল, কাবাডি, হাডুডু খেলার প্রচলন ছিল। এখনও এসব খেলা হয়। ভোলার কলঘাট এলাকায় একসময় স্টিমার ঘাট ছিল। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন এটি শুধু স্মৃতি।

ভাষা সংস্কৃতি

ভোলা (bhola) একটি বৃহত্তম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ হলেও এখানকার সংস্কৃতি বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের মতই। বরিশাল, লহ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব আছে এখানে। তবে ভাষার ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে শুদ্ধ বাংলা ভাষা চলমান; আঞ্চলিকতার কোন টান নেই। ভোলার পশ্চিমের কিছু এলাকায় বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব আছে।

তবে ভোলার (bhola) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রাচীন। পঞ্চাশের দশক থেকে বিভিন্ন গবেষণাধর্মী লেখায় ভোলায় সংস্কৃতি চর্চায় যাত্রা ও নাটকের প্রাধান্য বেশী দেখা যায়। পঞ্চাশের দশকে ভোলায় বিদ্যুৎ ছিলনা। হ্যাজাক জ্বালিয়ে গ্রামে-গঞ্জে যাত্রা, পালাগান ও নাটক হতো। ভোলার প্রথম সঙ্গীতভিত্তিক সংগঠন শিল্পী নিকেতন। নাট্যভিত্তিক সংগঠন মেঘনা শিল্পী সংসদ। এরপর রয়েছে সৃজনী সংসদ। এ সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। এখানে বর্তমানে বিহঙ্গ সাহিত্য গোষ্ঠী, আবৃত্তি সংসদ, ভোলা থিয়েটার এবং উদীচিসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও শিশু একাডেমী বেশ বেগবান। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর প্রথম নির্বাচিত সম্পাদক অধ্যক্ষ জনাব আফসার উদ্দিন বাবুল। তিনি একাধারে শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, সাংবাদিক ও ফাতেমা খানম কলেজের অধ্যক্ষ । শিল্পীদের মধ্যে মনজুর আহমেদ, সাথী করঞ্জাই, রেহানা ফেরদৌস, মৃদুল দে, উত্তম ঘোষ, অতুনু করঞ্জাই, জিয়া, শামস-উল আলম মিঠু, নেয়ামত উল্লাহ, মসিউর রহমান, পিংকু, ভাস্কর মজুমদার, প্রদীপ নাগ, আশীষ ঘোষ, মনিরুল ইসলাম, অমি দে প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। শিশু শিল্পীদের মধ্যে ১৯৮৭ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত সঙ্গীতের ৫টি শাখায় জাতীয় পর্যায়ে ৫টি স্বর্ণ পদক পেয়ে আলোচনায় আছেন ফারজানা আফসার লিয়ানা।

জেলায় দু’জন ওস্তাদ সঙ্গীত শিল্পী গুরুদাস নাগ ও মন্টু তালুকদার এবং সঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠক হেলাল উদ্দিন আহমেদ (ফেলূ মিয়) মৃত্যুবরণ করার পরও তাদের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদান সবাই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান একজন সাহিত্যিক, নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবে ষাট দশকে আলোচিত ছিলেন। বর্তমানে তার প্রকাশনা রয়েছে বেশ কিছু। ষাটের দশকের অভিনয় শিল্পী হিসেবে অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, কালীপদ দে, রতন চৌধুরী,আবদুল লতিফ, মাখন ঘোষ, শামিত্ব ঘোষ, সাবেরুল করিম চৌধুরী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

নদনদী

ভোলা (bhola) একটি দ্বীপ জেলা । ভোলার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ভোলা জেলাতে দুটি নদী রয়েছে। নদীগুলো হল মেঘনা ও তেতুলিয়া । ভোলা জেলার পূর্ব ও উত্তর পাশে  মেঘনা নদী অবস্থিত এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে তেতুলিয়া নদী। আর এই জেলার দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

ব্যবসা বাণিজ্য

ভোলা (bhola) জেলা বাংলাদেশের অন্য জেলার তুলনায় ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এখানে তেমন শিল্প গড়ে ওঠেনি। যোগাগোগ ব্যবস্থা এর অভাবে এ জেলার শিল্প বিকাশে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।

তবে গত কিছুদিন আগে Venture Energy Resource নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করায় আস্তে আস্তে শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এখানে প্লাষ্টিক, মোম, জুতা , আলকাতরা ইত্যাদি ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠছে।এখানকার বেশীরভাগ (প্রায় ৮০%)লোক মৎস্য জীবি, তাই এখানে কিছু বরফকল গড়ে ওঠেছে। তবে বোরহান উদ্দিনে প্রাপ্ত গ্যস বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিলে এ জেলায় শিল্প বিকশের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলাতে বর্তমানে ফারিত হ্যাচারী নামক একটি বিশাল কৃষি ফার্ম রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ভোলা (bhola) শহর ঢাকা থেকে নদী পথে দূরত্ব ১৯৫ কি.মি.। সড়কপথে বরিশাল হয়ে দূরত্ব ২৪৭ কি.মি. এবং লক্ষীপুর হয়ে দূরত্ব ২৪০কি.মি.।ভোলার সাথে অন্য কোন জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই।অন্য জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা সচল রাখার জন্য ভোলাবাসীকে লঞ্চ,স্পিড বোট এবং ফেরীর উপর নির্ভর করতে হয়।

বিবিধ

দেশের দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর এবং দেশের সর্ব বৃহৎ নদী মেঘনার কুল ঘেসে অবস্থিত একটি জেলা। যার সাথে কোনো জেলার সড়ক যোগাযোগ পথ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে “তাহলে ভোলা কি চর ?” না, ভোলা কোন চর নয়।

দেশের সর্ব বৃহৎ দ্বীপ ভোলা এবং শুধু দ্বীপ নয় ভোলা দেশের সুসজ্জিত একটি জেলা।ভোলা দেশের একমাত্র জেলা যে জেলার কোনো আঞ্চলিক ভাষা নেই। ভোলার মানুষ সব ধরনের ভাষায় সহজেই কথা বলতে পারে। ভোলা’ই দেশের একমাত্র জেলা যে জেলার মানুষ সবচেয়ে অতিথি পরায়ণ।

দেশের সিংহ ভাগ ইলিশের চাহিদা মেটাতে ভোলা থেকেই সরবরাহ করা হয় রুপালি ইলিশ,জাতীয় গ্রিডের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ভোলা থেকেই। গ্রিডে নতুন সরবরাহ ২২৫ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে ভোলায়। আছে দেশের ১২ তম সরকারি পলিটেকনিক ভোলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।দক্ষিণ বাঙলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট ভোলা সরকারি কলেজ। দেশের প্রায় অর্ধ ভাগ গ্যাস সরবরাহ করা হয় ভোলা থেকে।

ভোলার বিখ্যাত মহিষের দুধের টক দধি বিখ্যাত। সুপারি এবং মিষ্টির জন্য বিখ্যাত ভোলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য “কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ”খেতাবটি এই জেলার দখলেই। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ভোলার দ্বীপে।নদী পথে শান্তির বাহন বিলাশবহুল লঞ্চ গুলো ভোলার মানুষের গর্ব।

ভোলার দর্শনীয় স্থান

  • মনপুরা দ্বীপ
  • শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র
  • শাহবাজপুর মেঘনা পর্যটন কেন্দ্র
  • তুলাতলী পর্যটন কেন্দ্র(ভোলা সদর)
  • ফাতেমা খানম মসজিদ
  • চর কুকরী মুকরী
  • সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক
  • শিশু পার্ক
  • জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার, চরফ্যাশন
  • তারুয়া সমূদ্র সৈকত
  • দুদু মিয়ার মাজার
  • বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি যাদুঘর
  • নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদ
  • উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী
  • খামার বাড়ি -নজরুল নগর, চরফ্যাশন।
  • বিভাগীর টেক্সটাইল কলেজ
  • বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর জমিদার বাড়ি

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

  • মোস্তফা কামাল
  • কবি মোজাম্মেল হক,
  • মেজর হাফিজ উদ্দিন(বীর বিক্রম)
  • খান বাহাদুর নুরুজ্জামান
  • নলিনী দাস(ব্রিটিশ বিরোধি বিপ্লবি)
  • এডভোকেট ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন
  • কবি নাসির আহমেদ
  • মোহাম্মদ আবদুল মুহিত
  • শহিদ মোতাহার উদ্দিন মাস্টার
  • অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান
  • আমিনুল হক( ফুটবলার )
  • এ কেমকবুল আহমেদ
  • মোঃ হোসেন চৌধুরী
  • তৌসিফ(অভিনেতা)
  • ডাঃ আজাহার উদ্দিন আহমদ
  • আজিজুদ্দিন আহমদ
  • আবদুল হাই চৌধুরী
  • এম. মোকাম্মেল হক

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here