শেরপুর জেলার পরিচিতি

0
3144

ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার পরিচিতি (sherpur)

শেরপুর জেলা (sherpur) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্বে ১৮২৯-২০১৫ পর্যন্ত এটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ছিল। শেরপুর জেলার আয়তন ১,৩৬৪.৬৭ বর্গকিলোমিটার। শেরপুর জেলা পূর্বে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। শেরপুর শহর, দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯৮ কিলোমিটার (১২৩.০৩ মাইল) উত্তরে অবস্থিত।

শেরপুর জেলার পটভূমি

শেরপুরের ঐতিহাসিক পটভূমি

প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের আদি নাম পাওয়া যায় না। তবে এ অঞ্চলের হিন্দু শাসক দলিপ সামন্তের রাজ্যের রাজধানী গড় জরিপার উল্লেখ আছে। সম্রাট আকবরের সময় এ অঞ্চলের নাম দশ কাহনীয়া বাজু বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। শেরপুর (sherpur) পৌরসভার দক্ষিণ সীমান্তে মৃগী নদী হতে জামালপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮/৯ মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য সাগর। নদের উভয় পাড়ের নিকটবর্তী লোকদের প্রায় সময়ই নৌকায় যাতায়াত করতে হত। তারা খেয়া ঘাটের ইজারাদারের সহিত যাতায়াত মাশুল হিসবে বাৎসরিক চুক্তি অনুযায়ী ১০(দশ) কাহন কড়ি প্রদান করত। সে হিসেবেই এ অঞ্চলের নাম হয় দশকাহনীয়া। তৎকালে কড়ির মাধ্যমে বেচা-কেনা বা আর্থিক লেনদেন করা হত।

বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শেরআলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর। তখনও শেরপুর (sherpur) রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জরিপা। বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়ীতে শের আলী গাজীর মাজার এবং নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত । বৃটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নাম হয় শেরপুর সার্কেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১ তম জেলা ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেরপুরকে মহকুমা, ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদ শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫ টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করেন। জমিদারী আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শেরপুরবাসীর (sherpur) একটানা দীর্ঘ একশত বৎসরের সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত হয়েছিল প্রজাদের উপর জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং পরোক্ষভাবে অনেক ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনের উচ্ছেদ কল্পে। একসময় পাগল পন্থী নেতা টিপু পাগল শেরপুরের ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রই স্থাপন করেছিলেন। কংশ নদীর তীরবর্তী লেটির কান্দা গ্রামে এখন তাঁর বংশধররা পাগল বাড়িতে বসবাস করছে। জমিদারদের অত্যাচারের বিরূদ্ধে প্রজারা প্রায় সময়ই আন্দোলনে লিপ্ত থাকত। আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল বক্সারী বিদ্রোহ, প্রজা আন্দোলন , কৃষক আন্দোলন , ক্ষএিয় আন্দোলন।

ফকির বিদ্রোহঃ এতদঞ্চলে ফকির বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোনাবানু ফকির। তার বংশধররা বর্তমানে গাজীরখামার গিদ্দাপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। শের আলী গাজী এদের আশ্রয়েই মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক জীবন কাটিয়েছেন।

টঙ্ক আন্দোলনঃ জমিদাররা প্রজাদের নিকট হতে একর প্রতি পাঁচ মণ ধান এবং নগদ ১৫ টাকা খাজনা আদায় করত। নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান উৎপাদিত না হলেও তা দিতে হতো। এ বিধান রহিত করার জন্য প্রজারা আন্দোলন করেছিল।

নানকার আন্দোলনঃ দরিদ্র প্রজারা জমিদারদের বাড়িতে শারীরিক পরিশ্রম করার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি ভোগদখল করত। পরিশ্রম করতে অক্ষম হলে জমিও ছেড়ে দিতে হত। জমিদারদের বিরুদ্ধে উক্ত টঙ্ক ও নানকার আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন বাবু রবি নিয়োগী, খন্দকার মজিবর রহমান, জনাব আব্দুর রশিদ, ছফিল উদ্দীন প্রমুখ।

আদিস্থান আন্দোলনঃ শেরপুরের আদিবাসী উপজাতিদের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরাংশে গারো পাহাড় পর্যন্ত একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের দাবীতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আদিবাসী নেতা জলধর পাল এবং তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজন সদস্য এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সমস্ত আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক সমস্যার বৈষম্য দূরীকরণ ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।

স্বাধীনতা আন্দোলনঃ ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্ববানে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন তৎসঙ্গে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। শেরপুরেও একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং পরিষদের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আহ্ববানে যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সর্ব প্রথম ১২ জন নির্ভীক বালক স্থানীয় আড়াই আনীন বাড়ীতে (বর্তমানে মহিলা কলেজ ) সুবেদার আব্দুল হাকিমের কাছে অস্ত্র ধারণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। শেরপুর অঞ্চলের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব এড. আনিসুর রহমান(শেরপুর – শ্রীবরদী), জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুল হাকিম (নকলা-নালিতাবাড়ী), প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব নিজাম উদ্দীন আহমদ (শেরপুর), প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব আব্দুল হালিম (শ্রীবরদী)। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের মধ্যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জনাব এড. আব্দুস সামাদ, জনাব মুহসীন আলী মাস্টার , বাবু রবি নিয়োগী, জনাব আব্দুর রশিদ , জনাব আমজাদ আলী মাস্টার, জনাব এমদাদুল হক হীরা মিয়া, জনাব অধ্যাপক আবু তাহের, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জনাব আমজাদ হোসেন, জনাব আবুল কাসেম, মোঃ হাবিবুর রহমান, নকলার অধ্যাপক মিজানুর রহমান, মোজাম্মেল হক মাস্টার এবং ডাঃ নাদেরুজ্জামান।

পল্লী অঞ্চল ও শহর অঞ্চলে মক্তব মাদ্রাসা, উচ্চ প্রাইমারি ও নিম্ন প্রাইমারি জুনিয়র মাদ্রাসা, মাইনর স্কুল, সাংস্কৃতিক টোল ছিল। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিলনা। শেরপুরের নয়আনী জমিদারদের উদ্যোগে সর্ব প্রথম একটি মধ্য ইংরেজী স্কুল স্থাপন করা হয়। ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার জুবিলী উৎসব উপলক্ষে সে স্কুলটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হয় এবং নাম রাখা হয় ভিক্টোরিয়া একাডেমী। আড়াই আনী ও পৌনে তিনআনী জমিদারদের উদ্যোগে ১৯১৮/১৯ সালে গোবিন্দ কুমার পিস মেমোরিয়াল (জি,কে,পি,এম) নামে আরও একটি স্কুল স্থাপিত হয়। নয়আনী জমিদার চারুচন্দ্র চৌধুরীর চারু প্রেস নামে একটি ছাপাখানা ছিল। এ চারু প্রেসেই মীর মোশারফ হোসেনের বিষাদ সিদ্ধু গ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালে শেরপুর বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৫৭ সালে সরকারী কৃষি প্রশিক্ষায়তন, ১৯৬৪ সালে শেরপুর কলেজ এর পরে এস.এম. মডেল স্কুল, প্রতি উপজেলায় হাইস্কুল , স্বাধীনতা উত্তরকালে শেরপুর মহিলা কলেজ, ডাঃ সেকান্দর আলী কলেজ, পলিটেকনিক স্কুল, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়াও শেরপুর জেলার প্রতি উপজেলাগুলোতেও অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেরপুর তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসাটি জেলার বৃহত্তম কৌমী মাদ্রাসা। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কারিকুলাম অনুসারে এতে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে গড়জড়িপার বার দুয়ারী মসজিদ, মাইসাহেবার মসজিদ ও খরমপুর জামে মসজিদ দুটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ। দরবেশ মীর আব্দুল বাকীর সততায় মুগ্ধ হয়ে সুসঙ্গের মহারাজা তাকে মসজিদ সংলগ্ন ২৭ একর জমি দান করেছিলেন। আব্দুল বাকীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ছালেমুন নেছা মাই সাহেবার সময় তিনআনী জমিদার রাধা বল্লাভ চৌধুরী মসজিদের আট শতাংশ জমি বাদে সম্পূর্ণ জমিই জবর দখল করেন। শেরপুর শহরে আধ্যাত্মিক পাগল মমিন সাহেব একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন।

পক্ষান্তরে পৌনে তিনআনী জমিদার সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী শেরপুরের অবিসংবাদিত মুসলমান নেতা খান সাহেব আফছর আলী মিয়া সাহেবের মাধ্যমে খড়মপুর জামে মসজিদের নামে স্থানটুকু দান করেন। প্রাচীন তিনটি মন্দিরের মধ্যে একটি শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর মন্দির আড়াই আনী বাড়ীর মহিলা কলেজ সংলগ্ন অপর দুটি যথাক্রমে শ্রী শ্রী মা ভবতারা মন্দির নয়আনী বাজারে এবং শ্রী শ্রী প্যারিমোহন মন্দির তিন আনী বাড়ীর শেরপুর কলেজ সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। শেরপুর রোটারী ক্লাব ও রেড ক্রিসেন্ট রোডে শনি মন্দিরটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ মন্দির হিসেবে শেরপুরে পরিচিত।

শেরপুর (sherpur) পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী ৪টি বাজার প্রতি সপ্তাহে বসত। সেগুলি ছিল নয়আনী বাজার, রঘুনাথ বাজার, তেরাবাজার ও তিনানী বাজার। পৌরসভার দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় শহরের বড় একটি পাট গুদাম ছিল।

ঐতিহ্যবাহী তথ্যজড়িত বিষয়গুলোর মধ্যে আছে বর্তমান শেরপুর পৌর এলাকার পশ্চিমাংশে একটি গ্রামের নাম কসবা। এর আরবী মুল শব্দ কসবাহ এবং এর অর্থ শহর হতে ছোট কিন্তু গ্রামের মধ্যে বড় সমৃদ্ধশালী গ্রাম। মোগল আমলে বাঙ্গলার সুবেদার শাহজাদা সুজা এ কসবাতেই তার আঞ্চলিক প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। চারদিকে পরিখাবেষ্টিত মোগলবাড়ী, কাছারী পাড়া , তার পশ্চিমে কাঠগড়, তার উত্তর পশ্চিমে বিচারক কাজীদের বসতবাড়ী কাজী গলী, কাজী গলী মসজিদ, দরবেশ শাহ কামালের দরগাহ, ধোপা ঘাট,নাপিত বাড়ী নামের স্থানগুলোর মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারও আগে বার ভূঁইয়া নেতা ঈসা খান হাজরাদীর কোচ রাজা লক্ষণ হাজোকে পরাজিত করে হাজারাদী দখল করেন এবং ব্রহ্মপুত্রের উজান পথে দশকাহনীয়া বাজু বা বর্তমান শেরপুরে আরও দুটি দুর্গ নির্মাণ করেন। রাজা লক্ষণ হাজো তার লোক-লস্করদের নিয়ে ভারতের বিহার প্রদেশের উত্তর -পূর্বাংশে চলে যায় এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে । তাদের নামেই এ অঞ্চলের নাম হয় কোচ বিহার। ঠিক সে সময়ই ঈশা খাঁর শক্তি বৃদ্ধির কাহিনী শুনে সম্রাট আকবর ঈশা খানকে দমন করার জন্য রাজপুত বীর সেনাপতি মানসিংহকে এ অঞ্চলে প্রেরণ করেন।

শেরপুর (sherpur) পৌর এলাকার উত্তরাংশে কালীগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ছিল। আসামের দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ হতে পূর্বে নেত্রকোনা পর্যন্ত বিচার কার্য ও শাসন সংরক্ষণ এ কেন্দ্র হতেই সম্পন্ন হত। এই কালীগঞ্জেই সেনানিবাস ছিল এবং নিকটস্থ মোবারকপুর গ্রামে কোদালঝাড়া নামক উঁচু টিলার উপর সামরিক কসরৎ পরিচালনা করা হত। জনশ্রুতি আছে যে, পার্শ্ববর্তী ইচলী বিল ও গড়জরিপার কালীদহ সাগর খননকালে শ্রমিকেরা এখানে একত্র হয়ে তাদের কোদালের মাটি ঝেড়ে ফেলত। তাতেই ঐ টিলাটির সৃষ্টি হয় এবং নামকরণ করা হয় কোদাল ঝাড়া। কোদাল ঝাড়ার দক্ষিণে মীরগঞ্জে মৃগী নদীর পূর্ব তীরে থানা ছিল। পরবর্তীকালে থানা কার্যালয়টি শহরের পূর্ব দক্ষিণে স্থাপিত হয়। থানাঘাট নামটি এখনও রয়ে গেছে।

বৃটিশ আমলের শুরু থেকেই শেরপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ছিল। শেরপুরের অনেক উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তির মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে শেরপুর পাক- ভারত বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁদের মধ্যে বাগরাকসার অধিবাসী চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লোখযোগ্য। শেরপুরের নাট্য সংগঠনগুলোও নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে প্রায় সব সময়ই লোকদের আনন্দ দিত।

খেলাধূলার দিক দিয়েও শেরপুর কোন সময়ই পিছিয়ে ছিল না। জনপ্রিয় খেলাধূলার মধ্যে ফুটবল ছিল পীঠস্থানে। তৎকালীন ফুটবল খেলোয়ারদের মধ্যে হযরত আলী মৃধা, মোহাম্মদ আলী, রাইচরণ সাহা, সৈয়দ আঃ খালেক, শামছুল গণি চৌধুরী, ঝন্টু মৈত্র, মজিবুর রহমান, টুরু মিয়া, কালা বল, ছানা বোস প্রমুখ অন্যতম। অন্যান্য খেলাধুলার মধ্যে বর্ষাকালে নৌকা বাইচ, খড়ায় ঘোড়ার দৌড়, বলদের দৌড়, হা-ডু-ডু, মহেলদার , বৌছির খেলা মহরমের সময় লাঠি খেলা, তলোয়ার খেলায় মেতে উঠতো সর্বত্র।

শেরপুরের ভৌগোলিক পরিচিতি

শেরপুর (sherpur) জেলা পূর্ব পশ্চিমে ৮৯– ৫০ পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৯০– ১৫ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত। উত্তর দক্ষিণে ২৪– ৫৫ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫– ১৬ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। অধিবাসীদের মধ্যে মুসলমান এবং হিন্দুই প্রধান। তাছাড়া পাহাড়ী জনপদে আদিবাসী, গারো, খ্রিস্টানও রয়েছে।

নদী-খাল-বিল ও পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা শেরপুর এক সময় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সীমার মধ্যে স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছিল। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে শহর থেকেই উত্তর আকাশে গাঢ় নীল রঙে আঁকা পাহাড়ের রেখা দেখা যেতো। এখনও শহর থেকে বের হয়ে উত্তর সীমান্তে অগ্রসর হতে থাকলে আকাশে পাহাড়ের গাড় নীল আবছায়া স্পষ্ট হতে থাকে। সেটাই গারো পাহাড়।

একদা শেরপুরের (sherpur) উত্তর ও উত্তর-পূর্বের পাহাড়ী অঞ্চল ব্যতিরেকে সবটাই ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা জলভূমি আর চরভূমি। ব্রহ্মপুত্র নদ বারবার তার গতি পরিবর্তন করে নতুন নতুন চর তৈরী করে শেরপুরের ভূ-প্রকৃতিকে পাল্টে দিয়েছে। এইসব চরভূমিগুলি ধীরে ধীরে বসতি অঞ্চল হয়ে শেরপুর পরগণার মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের জনবহুল গ্রাম ও শহর তৈরি করেছে। মোঘল আমলে চর-খাল বিলে পরিপূর্ণ এ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র তখন এত চওড়া ও খরস্রোতা ছিলো যে, সেই নদী পার হয়ে শেরপুর পৌঁছতে সময় লাগতো এক প্রহর বা তিন ঘন্টারও ওপর। আর এই নদী পারাপারের মাশুল ছিল দশ কাহন বা কড়ি। পুরনো দলিল দস্তাবেজে তাই এর উল্লেখ পাওয়া যায় দশকাহনিয়া বাজু (বিভাগ) হিসেবে।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় ব্রহ্মপুত্র নদ জামালপুর থেকে শেরপুরের শেরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাকৃতিক নিয়মেই ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ সরে যায় দক্ষিণের দিকে। কালক্রমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর পড়ে লছমনপুর, চরপাড়া, চরশেরপুর, মুচারচর, বয়রা, শীতলপুরসহ অনেকগুলো জনপদ ব্রহ্মপুত্র তথা শেরী নদীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে। শেরপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের মৃগী নদী ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকারূপে প্রসারিত ছিলো। পরবর্তীকালের ইচলি বিল এই অববাহিকারই স্তব্ধ ভগ্নাংশ। বর্তমানে চর এলাকার কোন কোনটির নামের পরিবর্তন ঘটেছে। পুরনো নাম হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন শহরের নবীনচরের নাম হয়েছে নবীনগর। চরশেরপুর, চরপক্ষীমারী, লছমনপুর, জঙ্গলদী ব্রহ্মপুত্রের এসব চরভূমি প্রায় তিনশত বছরের পুরনো। শেরপুরের উত্তরাংশে ছিল দুর্গম পার্বত্য ও অরণ্য অঞ্চল। পাহাড়ী এসব উপত্যকায় ছিলো আদিবাসী কোচ, গারো, হাজং, রাজবংশি, হদি, বানাই, বর্মনদের বাস। বন্যহাতি, বনমহিষ, বাঘ, ভল্লুকসহ নানা হিংস্র সব জীবজন্তুর আবাস ছিলো এসব অরণ্য রাজীতে। খ্রিস্ট্রীয় চতুর্দশ শতাব্দিতে শেরপুরের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে আদিবাসী সামন্তর পৃথক রাজত্ব কায়েম করেছিলো। গড়জড়িপা ছিলো তার অন্যতম। পঞ্চদশ শতাব্দির শেষভাগে সেসব সামন্তরাজের অবসান ঘটে।

শেরপুর জেলার তথ্যাবলী

আয়তন১৩৬৩.৭৬ বর্গ কিলোমিটার
সীমানাউত্তরে মেঘালয়, দক্ষিন ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা
আন্তর্জাতিক সীমানা৩০ কিলোমিটার
মোট জনসংখ্যা১৫,৪২.৬১০ জন
মোট খানার সংখ্যা৩,৬২,১৫৪ টি
উপজেলা৫ টি
পৌরসভা৪ টি
ইউনিয়ন৫২ টি
গ্রাম৬৭৮ টি
শিক্ষার হার৪৮.০৪%

শেরপুরের প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

About Sherpur

শেরপুর জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

শেরপুর (sherpur) জেলা বর্তমানে তিনটি নির্বাচনী এলাকার (শেরপুর-১, শেরপুর-২ ও শেরপুর-৩) অধীন। শেরপুর জেলা ৫ টি উপজেলা, ৫২ টি ইউনিয়ন, ৪৫৮ টি মৌজা, ৬৯৫ টি গ্রাম, ৪ টি পৌরসভা, ৩৬ টি ওয়ার্ড এবং ৯৯ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। উপজেলাগুলো হলোঃ

  • ঝিনাইগাতী
  • নকলা
  • নালিতাবাড়ী
  • শেরপুর সদর
  • শ্রীবরদী

শেরপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর নাম
চরশেরপুর,বাজিতখিলা,পাকুরিয়া,ভাতশালা,বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি,কামারের চর,ধলা,কামারিয়া, লছমনপুর,রৌহা, চরপক্ষীমারী,বলায়ের চর,গাজির খামার, চরমোচারিয়া

নালিতাবাড়ী উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর নাম
নন্নী,যোগানীয়া,নালিতাবাড়ী,মরিচপুরান,কাকরকান্দ,পোড়াগাও,রুপনারায়নকুড়া,রাজনগর,বাঘবেড়,কলসপাড়,রামচন্দ্রকোড়া,নয়াবিল

শ্রীবদী উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর নাম
গোশাইপুর,তাতীহাটি,রাণী শিমুল,কুড়িকাহনীয়া,ভেলুয়া,সিংগাবরুনা,গড়জরিপা,শ্রীবরদী,কেকেরচর,কাকিলাকুড়া

নকলা ‌উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর নাম
নকলাটালকি,পাঠাকাটা,গৌড়দ্বার,বানেশ্বর্দী,পাঠাকাটা,টালকি,চর অষ্টধর,চন্দ্রকোনা

ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর নাম
কাংশাধানশাইল,নলকুরা,গৌরীপুর,ঝিনাইগাতী,হাতিবান্দা

শেরপুরের শিল্প ও বাণিজ্য

শেরপুরের শিল্প বাণিজ্য

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ইংরেজ আমল শুরুর পূর্ববর্তী সময়ে শেরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প সম্পর্কে নয়আনীর জমিদার শ্রী হরচন্দ্র চৌধুরী রচিত ও ১৩৬ বছর আগে প্রকাশিত ‘শেরপুর বিবরণ’ বইয়ে কিছু প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়। তার গ্রন্থেও সেসময়ে এতদঞ্চলের শিল্প ও বাণিজ্য কৃষিভিত্তিক ছিল তার প্রমাণ মেলে। শুরুতেই গ্রন্থকার লিখেছেন, ‘‘কৃষিকার্যই অধিকাংশ লোকের প্রধান উপজীব্য’’। এ গ্রন্থে তখনকার কৃষকদের চাষপদ্ধতি ও উৎপাদিত ফসলের বিবরণ রয়েছে। সে সময় চাষীরা ‘বাতর’ বা ‘আল’ বেঁধে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নালা কেটে পানি নিষ্কাশন করতো। সেচের পানি যোগান দেয়ার জন্য ‘দোন’ ব্যবহার করতো। জমিতে সার হিসেবে গোবর, খৈল, জৈবিক সার ও ছাই প্রয়োগ করতো। সেসময় সমতল এলাকার চাষীরা বাওয়া (আমন), বোরো ও আশু (আউশ) ধান, চিনা, কাওন, কোষ্টা (পাট) সর্ষপ (সরিষা), তিল, খেসারি, মটর ও মুসুর ডালের আবাদ করত। পাহাড়ি এলাকায় উঁচুভূমিতে বসবাসকারী উপজাতি-আদিবাসীদের দেওধান্য, মাক্কু (ভুট্টা), বিন্নিকচু ও কার্পাস প্রধান উৎপন্ন ফসল ছিল। সে সময় ডালু অঞ্চলে উন্নত মানের কার্পাস তুলা উৎপাদিত হতো। এছাড়া পাহাড়ি এলাকায় তারাই বাঁশ, তেজপাতা, পচাপাতা (ঔষধী) ও নানা প্রজাতির কাঠ জাতীয় বৃক্ষ সহজলভ্য ছিল। আর এসময় উৎপাদিত ফসল, বাঁশ ও কাঠ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হত।

শেরপুরের (sherpur) অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক, যদিও অকৃষি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। জেলার মোট ৩,৩৫,৪৬০ বসতবাড়ির মধ্যে, ৬০.১২% খামার যা বিভিন্নরকম ফসল উত্পন্ন করে যেমন স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, ডাল, বিভিন্নরকম শাকসবজি, তামাক এবং অন্যান্য। কলা, আম, জাম, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, কাঁঠাল, তাল, জাম্বুরা, বেল, পেঁপে, বড়ই, কামরাঙ্গা, আতাফল ইত্যাদি বিভিন্ন ফল চাষ করা হয়। দেশের অন্যান্য অংশের মতো এই জেলায়ও বিভিন্ন জাতের মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। নদী, উপনদী চ্যানেল এবং খাঁড়ি থেকে বিভন্ন প্রকার মাছ ধরা হয়।জনপ্রিয় স্বাদুপানির মাছ হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, চিতল, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস, গজাড়, শোল, পাবদা, কই, শিং, ফালি, বেলে, টেংরা ইত্যাদি। এছাড়াও সদ্য পরিচিত বিদেশী বিভিন্নরকম মাছ হচ্ছে তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ইত্যাদি। এছাড়াও ফসল, গৃহপালিত পশু ও মৎস্য পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। অকৃষি কর্মকান্ডেও জেলার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্র বহুলাংশে ধানের চাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কুঁড়া, তুষ সহ অনেক ছোট ছোট শিল্পের যোগান ও পরিবহন খাতের গ্রাহক হয়ে সাহায্য করছে এইসব চাতাল। এ অঞ্চেলর পাহাড়ে লাল বনমোরগ ও বিভিন্ন প্রানী পাওয়া যায়।

রপ্তানিকৃত কৃষিপণ্যের নাম স্থানঃ

সেসময় শেরপুর থেকে সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কলকাতা, রংপুর, হোসেনপুর ও কাগমারী তে যেসব পণ্য রপ্তানি হতো, সেসবের মধ্যে ধান, চাল, কোষ্টা (পাট), সরিষা, তিল, কার্পাস, কাঁঠাল, গজদন্ত (হাতীর দাঁত), উল্লেখযোগ্য। আমদানি পণ্যের মধ্যে ছিল লবণ, সুপারী, নালী, গুড়, চিনি, তামাক, কাপড়, বাসন, মশলা, মনোহা

শেরপুরের প্রাকৃতিক সম্পদ

শেরপুর (sherpur) জেলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষিজ উৎপাদন, সস্তা শ্রম, ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ – এর উপর ভিত্তি করে শেরপুর জেলাকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ সরকারের সকল কার্যক্রমকে সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

শেরপুরের (sherpur) সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ চিনামাটি বিদেশে রফতানী করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। দেশে যেসব খনিজ সম্পদ রয়েছে তার মধ্যে সিরামিক বা সাদামাটি অন্যতম। জেলার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলে পাওয়া যায় অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ  পাথর, সাদা মাটি , নুড়ি ও সিলিকা বালি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন কাঁচামাল যা বিদেশে রফতানি করে বছরে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। শেরপুরের পাহাড়ী অঞ্চলে যে সাদা মাটি বা চীনামাটি পাওয়া যায় তা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে উন্নত  জাতের প্লেট,থালা,বাটি জাতীয় সামগ্রী ছাড়াও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম । ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ভূ-তত্ত্ব জরিপ দপ্তর (জিএসবি) এক জরিপ চালিয়ে এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে সাদা মাটির মজুদ পান।

১৯৯০ সালে ঝিনাইগাতী ও  শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলের সাদা মাটি পরীক্ষা করা হয়। এ মাটি  কেত্তলিন জাতীয় সিরামিক সামগ্রী তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। সরকারিভাবে উত্তোলন করে থালা-বাসন তৈরি ছাড়াও রাবার, সিমেন্ট, কাগজ, ইনসুলেটর বা বৈদ্যুতিক সামগ্রীতে ব্যবহার করে বিদেশে রফতানি করে বিপুল  পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এখানকার সাদামাটি দেখতে হালকা ধূসর অথবা হালকা বাদামী । এতে এসব কারখানায় তৈরি তৈজসপত্র দেশের  চাহিদা মেটানো ছাড়াও বিদেশে রফতানী করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব এবং শেরপুরের লাখ লাখ শ্রমিকেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে। শেরপুরের  পাহাড়ী অঞ্চলসমূহে এ শিল্পের পর্যাপ্ত কাঁচামাল অর্থাৎ কেত্তলিন জাতীয় সাদা মাটির বিপুল পরিমাণ মজুদ রয়েছে। ১৯৯০ সালের ভু-জরিপ মতে শেরপুর জেলার পাহাড়ী এলাকায় সাদা মাটির সন্ধান মেলে। যার দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২ মিটার লেন্স আকারে ছড়ানো। মজুদের পরিমাণ  প্রায় ১৩ হাজার  টনের মতো। এ মাটি সাধারণতঃ দেখতে হালকা ধূসর বর্ণের, কিছুটা হালকা বাদামী- সাদা বর্ণের। এতে এ্যালুমিনিয়াম (হি-২.৩) পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৩০ভাগ। অনুরুপ সাদামাটি ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা গজনী এবং পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলেও বিদ্যমান।

শেরপুরের নদ-নদী

 ব্রহ্মপুত্র

হিমালয়ের মানস সরোবর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদটি চীন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে নদটি যমুনা নাম ধারণ করে প্রধান অংশ জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ হয়ে চলে যায় এবং জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ হয়ে এই নদের বাকি অংশ শেরপুর জামালপুর সীমারেখায় প্রবাহমান হয়ে এই নদ ময়মনসিংহ হয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করে।

কংশ

ভারতের তুরা পাহাড়ে বিভিন্ন ঝর্ণার সম্মিলনে কংশ নদীর উৎপত্তি। শেরপুরের হাতিবাগার এলাকা দিয়ে কংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ভোগাই

ভারতের তুরা পাহাড়ে বিভিন্ন ঝর্ণার সম্মিলনে কংশ নদীর উৎপত্তি। শেরপুরের (sherpur) হাতিবাগার এলাকা দিয়ে কংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে  শেরপুরের নালিতাবাড়ী পর্যন্ত এ নদীটির নাম ভোগাই। নালিতাবাড়ীর ৫ মাইল ভাটিতে এসে দিংঘানা, চেল্লাখালী, দেওদিয়া মারিসি, মালিঝি নামে উপনদীগুলো ভোগাইয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। ভোগাই সে স্থানে বেশ খরস্রোতা বলে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ফুলপুরের কাছাকাছি এসে খড়িয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

এছাড়াও শেরপুর জেলার মধ্যে রয়েছে মালিঝি, সোমেশ্বরী, নিতাই, মহারশি প্রভৃতি নদী।

শেরপুরের আদিবাসী

বর্তমান শেরপুর (sherpur) জেলার উত্তর সীমান্তের গারো পাহাড় ও তার প্বার্শবর্তী সমতল এলাকায় কোচ,গারো,হাজং, ডালু, বানাই এবং রাজবংশী ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন কোচ, গারো প্রভৃতি নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।

শেরপুরের দর্শনীয় স্থানসমুহ

জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ হচ্ছে:

  • কলা বাগান,
  • গজনী অবকাশ কেন্দ্র,
  • গড়জরিপা বার দুয়ারী মসজিদ,
  • গোপী নাথ ও অন্ন পূর্ন্না মন্দির,
  • ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ,
  • নয়আনী জমিদার বাড়ি,
  • নয়আনী জমিদার বাড়ির রংমহল,
  • নয়াবাড়ির টিলা,
  • পানিহাটা-তারানি পাহাড়,
  • পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি,
  • বারোমারি গীর্জা ও মরিয়ম নগর গীর্জা,
  • মধুটিলা ইকোপার্ক,
  • মাইসাহেবা জামে মসজিদ,
  • রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা,
  • লোকনাথ মন্দির ও রঘুনাথ জিওর মন্দির,
  • সুতানাল দীঘি,
  • অলৌকিক গাজির দরগাহ, রুনিগাও, নকলা;
  • আড়াই আনী জমিদার বাড়ি,
  • কসবা মুঘল মসজিদ,
  • গড়জরিপা কালিদহ গাং এর ডিঙি,
  • গড়জরিপা ফোর্ট (১৪৮৬-৯১ খ্রিষ্টাব্দ),
  • জরিপ শাহ এর মাজার,
  • নয়াআনী বাজার নাট মন্দির,
  • নালিতাবাড়ির বিখ্যাত রাবারড্যাম,
  • পানি হাটা দিঘী,
  • মঠ লস্কর বারী মসজিদ (১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দ),
  • মুন্সি দাদার মাজার, নয়াবাড়ি, বিবিরচর, নকলা;
  • শাহ কামাল এর মাজার (১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ),
  • শের আলী গাজীর মাজার
  • নকলার ঐতিহাসিক বেড় শিমুল গাছ

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

  • রবি নিয়োগী
  • আফসার আলী
  • আবদুল্লাহ-আল-মাহমুদ
  • খন্দকার আবদুল হামিদ
  • আতিউর রহমান আতিক এম.পি
  • করম শাহ
  • টিপু শাহ
  • গোপালদাস চৌধুরী
  • জানকুপাথর ও দোবরাজপাথর
  • নিগার সুলতানা (ক্রিকেটার)
  • ফাতেমা তুজ্জহুরা
  • মতিয়া চৌধুরী
  • মোতাসিম বিল্লাহ খুররম

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here