সুনামগঞ্জ জেলার পরিচিতি

0
3418

সুনামগঞ্জ জেলা (sunamganj) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলি থেকে অনুমান করা হয় যে, সুনামগঞ্জ জেলার সমগ্র অঞ্চল প্রাচীন কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। জনৈক মোঘল সিপাহি সুনামুদ্দির নামে সুনামগঞ্জের নামকরন করা হয় ।১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সুনামগঞ্জকে মহকুমায় এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে জেলায় উন্নীত করা হয় । সুনামগঞ্জ জেলার উত্তরে খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড়, পূর্বে সিলেট জেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে নেত্রকোনা জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা

সুনামগঞ্জ জেলার পটভূমি

নামকরণ:

‘সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের (sunamganj) নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিত কৃতিত্বের জন্য সম্রাট কর্তৃক সুনামদিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপ প্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকে বহু ভাষাভাষী জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছে সার্বভৌম বাংলাদেশের বর্তমান সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ অঞ্চল । পৌরাণিক যুগে প্রাচীন কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল সুনামগঞ্জ । সুনামগঞ্জের লাউড় পর্বতে কামরূপ রাজ্যের উপরাজধানী স্থাপন করেছিলেন রাজা ভগদত্ত । রাজা ভগদত্তের শাসনামলে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলাসহ বাংলাদেশের ঢাকা এবং ময়মনসিংহ জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চল লাউড় রাজ্যের অধীন শাসিত হত । লাউড়ের গড়ের ভগ্নাবশেষ আজও অত্র অঞ্চলে বিদ্যমান, যা রাজা ভগদত্তের বাড়ি বলে জনশ্রুতিতে ব্যক্ত । লাউড় রাজ্যের চতুসীমা ছিল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ, পূর্বে জৈন্তিয়া, উত্তরে কামরূপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাম্মণবাড়িয়া পর্যন্ত। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি প্রকৃতপক্ষে ছিল রাজবাড়ী। এ রাজ্যে স্থপতি রাজা ভগদত্তের ১৯ জন বংশধর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য স্থাপন করে। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাচীন লাউড় রাজ্য কামরূপ রাজ্য থেকে আলাদা হয়। দশম শতক থেকে স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন শুরু হয় । মহাভারতের যুদ্ধে অর্জুনের পক্ষে লড়তে গিয়ে নিহত হন রাজা ভগদত্ত। দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা বিজয় মাণিক্য লাউড় রাজ্য শাসন করেন। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষে তিনি সুনামগঞ্জের (sunamganj) জগন্নাথপুরেও রাজ্য স্থাপন করেন। এ সময় বঙ্গের ব্রাহ্মণরা বল্লাল সেনের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে রাজা বিজয় মাণিক্যের রাজ্যে এসে আশ্রয় নেন। বিজয় মাণিক্যের পর কারা লাউড় শাসন করে তা এখনো অজানা। তেরশত শতাব্দীর পর চৌদ্দ’শ সালের প্রথমার্ধে কাত্যায়ন গোত্রিয় দিব্য সিংহ নামে নৃপতি লাউড়ে রাজত্ব করেন। তখন লাউড়ের রাজধানী নবগ্রামে স্থানান্তর হ্য়। এ সময় লাউড় এবং জগন্নাথপুর রাজ্য অনেক জ্ঞানী পুরুষের আবির্ভাবে প্রফুল্লিত হয়েছিল। রাজ্যের রাজমন্ত্রী কুবেরাচার্য ছিলেন একজন সুপণ্ডিত ব্যক্তি। যার জ্ঞানের চর্চা ভারতবর্ষের অন্যতম বিদ্যাপীঠ নবদ্বীপ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ছিল। এছাড়া উক্ত রাজ্যের নবগ্রামে মাধবেন্দ্রপুরী নামে আরেক জন জ্ঞানী সাধু পুরুষ বসবাস করতেন। এই মাদেবন্দ্রপুরির কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে লাউড়ের যুবরাজ রমানাথ বা রামা ও মন্ত্রীতনয় অদ্বৈত্যেচার্য সারা ভারতবর্ষে স্মরণীয় হয়ে আছেন। রমানাথ সিংহ উপযুক্ত হলে রাজা দিব্য সিংহ রাজ্যভার তার পুত্র রমানাথকে দিয়ে, শান্তি সাধনায় তিনি তার মন্ত্রীতনয় অদ্বৈত্যের আখড়া শান্তিপুরে চলে যান। সেখানে থেকে অদ্বৈত্যের উপদেশে বৈষ্ণবীধর্ম গ্রহণ করেন এবং সাহিত্য চর্চায় মনোযুগী হয়ে বাংলা ভাষায় বিঞ্চুভক্তি শাস্ত্র গ্রন্থ সহ আরও কয়েকটি গ্রন্থের অনুবাদ করেন। অতপর অদ্বৈত্য বাল্যলিলা গ্রন্থ রচনা করে কৃষ্ণদাস নামে আখ্যাত হন। রাজা দিব্য সিংহের পুত্র রামানাথ সিংহের তিন পুত্র ছিল। এই তিন পুত্রের মধ্যে একজন কাশীবাসি হন এবং এক পুত্রকে লাউড়ের রাজ সিংহাসনে বসিয়ে; রামানাথ সিংহ তার অন্য পুত্র কেশবের সাথে জগন্নাথপুরে আসেন। প্রাচীন ইতিহাসে লাউড় রাজ্য সব সময় স্বাধীন ছিল বলে জানা যায়। সৈয়দ মূর্তজা আলী তার রচিত ‘হযরত শাহ্জালাল ও সিলেটের ইতিহাস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে লাউড়ের রাজা গোবিন্দ সিংহ তার জ্ঞাতিভাই জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিংহের সঙ্গে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিলেন। এর জের ধরেই বিজয় সিংহ গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন। প্রায় পনেরো’শ শতকে হবিগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলে বানিয়াচং রাজ্য স্থাপিত হয়। এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কেশব একজন বণিক ছিলেন। তিনি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে এসেছিলেন এবং কালী নামের দেবির পূজা নির্বাহের লক্ষ্যে দৈব্ বাণীতে শুকনো ভূমির সন্ধান প্রাপ্ত হয়ে সেখানে অবতরণ করে দেবি পূজা সমাধান করে দৈব বাণী মতে সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। এক সময় শ্রীহট্টের উত্তর সীমা হতে ভেড়ামোহনা নদী পর্যন্ত বানিয়াচং রাজ্য বিস্তৃত ছিল। প্রায় শতের’শ শতকের শেষের দিকে গোবিন্দ খাঁ কর্তৃক শ্রীহট্ট ভূমির প্রাচীন রাজ্য “লাউড়” ইহার অধিকার ভূক্ত হয়। যাহা মূলত তৎকালে জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশের অধিকারে আসার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশ তাদের অধিকার হারায় এবং ইহার জের ধরে দুই রাজ্যের মধ্যে হতা-হতীর কারণ জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশ ধংশ হয়। ঐ সময়ে বানিয়াচং রাজা গোবিন্দ খাঁ দিল্লীর সম্রাটদের দ্বারা মুসলমান হয়ে, হাবিব খাঁ নাম ধারণ করে দেশে ফিরেন। শতরে’শ শতকের পরে লাউড় রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং মোঘলরা এর নিয়ন্ত্রক হন । যার ভিত্তিতে সুনাম উদ্দিন নামে জনৈক মোঘল সিপাহী এ অঞ্চলে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। পরে উপজেলা, মহকুমা ও জেলা শহরে রুপান্তরিত হয়। বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার নাম ছিল বনগাঁও। ১৮৭৭ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠত হয়। ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। জেলায় মোট ৮১টি ইউনিয়ন এবং ২৭৭৩টি গ্রাম আছে। জেলার প্রথম হাইস্কুল সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সাল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়, দ্বিতীয় হাইস্কুল দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৫ সালে দিরাই উপজেলায়, তৃতীয় হাইস্কুল ব্রজন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁওয়ে। ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ।

সুনামগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা

জনসংখ্যা ২৪,৬৭,৯৬৮ জন। (আদমশুমারী ২০১১)
পুরুষ ১২,৩৬,১০৬ জন।
মহিলা ১২,৩১,৮৬২ জন।
জন সংখ্যার ঘনত্ব ৬৫৯ জন (প্রতি বর্গ কি:মি:)
পুরুষ-মহিলা অনুপাত ১০১:১০০

সুনামগঞ্জ জেলার তথ্যাবলী

প্রশাসনিক কাঠামো

সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন হচ্ছে:

  • সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা
  • ছাতক উপজেলা
  • বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা
  • দিরাই উপজেলা
  • ধর্মপাশা উপজেলা
  • দোয়ারাবাজার উপজেলা
  • জগন্নাথপুর উপজেলা
  • জামালগঞ্জ উপজেলা
  • তাহিরপুর উপজেলা
  • শাল্লা উপজেলা
  • দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা
ইউনিয়ন : আপ্তাবনগর, মোল্লাপাড়া, রঙ্গারচর, জাহাঙ্গীরনগর, সুরমা, গৌরারং, মোহনপুর, কাঠইর, লক্ষণশ্রী

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা
ইউনিয়ন : জয়কলস, শিমুলবাক, পাথারিয়া, পশ্চিম বীরগাঁও, পূর্ববীরগাঁও, পশি্চম পাগলা, পূর্ব পাগলা, দরগাপাশা

ছাতক উপজেলা
ইউনিয়ন : ছাতক ইউনিয়ন পরিষদ, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউপি, নোয়ারাই ইউপি, কালারুকা ইউপি, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও, খুরমা উত্তর, দক্ষিণ খুরমা, চরমহল্লা, ইসলামপুর, জাউয়া বাজার, সিংচাপইড়, দোলার বাজার, ভাতগাও

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা
ইউনিয়ন : সলুকাবাদ, ধনপুর, পলাশ, বাদাঘাট(দঃ), ফতেপুর

দিরাই উপজেলা
ইউনিয়ন : রফিনগর, ভাটিপাড়া, রাজানগর, চরনারচর, দিরাই সরমঙ্গল, করিমপুর, জগদল, তাড়ল, কুলঞ্জ

ধর্মপাশা উপজেলা
ইউনিয়ন : মধ্যনগর, চামারদানী, বংশীকুন্ডা(দঃ), বংশীকুন্ডা(উঃ), ধর্মপাশা, সেলবরষ, পাইকুরাটি, জয়শ্রী, সুখাইর রাজাপুর(উঃ), সুঃ রাজাপুর(দঃ)

দোয়ারাবাজার উপজেলা
ইউনিয়ন : লক্ষীপুর, বাংলাবাজার, নরসিংপুর, মান্নারগাঁও, পান্ডারগাঁও, দোহালিয়া, দোয়ারাবাজার, বোগলাবাজার, সুরমা

জগন্নাথপুর উপজেলা
ইউনিয়ন : কলকলিয়া ইউপি, পাটলী ইউপি, মীরপুর ইউপি, চিলাউড়া হলদিপুর ইউপি, রাণীগঞ্জ ইউপি, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউপি, আশারকান্দি ইউপি, পাইলগাঁও ইউপি

জামালগঞ্জ উপজেলা
ইউনিয়ন : জামালগঞ্জ, সাচনা বাচার, বেহেলী, ভীমখালী, ফেনারবাক

তাহিরপুর উপজেলা
ইউনিয়ন : শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ, বড়দল দক্ষিণ, বড়দল উত্তর, বাদাঘাট, তাহিরপুর, বালিজুরী

শাল্লা উপজেলা
ইউনিয়ন : আটগাঁও, হবিবপুর, বাহাড়া, শাল্লা

সুনামগঞ্জ জেলার ভাষা ও সাংস্কৃতিক

ভাষা

সুনামগঞ্জের (sunamganj) আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে প্রাচীন চর্যাপদের ভাষার মিল পরিলক্ষিত হয়। অন্য অঞ্চলের সঙ্গেও এমন দাবী যুক্তিযুক্ত। অন্তত বিশেষজ্ঞদের অভিমত এমনটিই। পণ্ডিত সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, চর্যাপদের ভাষা পশ্চিমবঙ্গের উপভাষা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে এটি প্রাচীন বঙ্গ কামরূপী ভাষা। আবার কেউ কেউ বলেন প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন মাত্র। আমাদের অভিমত হলো, বাংলা ভাষাসহ উড়িয়া, অসমীয়া, মৈথিলী ইত্যাদি ভাষা ও বাংলা ভাষার উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষাগুলোর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে চর্যাপদের ভাষার মিল ছিল সুদূর কিংবা অদূর অতীতে, কিন্তু আজ আর নেই। সে ক্ষেত্রে কেবল ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জের- বলা ভাল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের- আঞ্চলিক ভাষা। ব্যতিক্রমী প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ভাষা ব্যতীত অন্যান্য উপভাষাগুলো দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রকে সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করেছে। প্রাচীন লাউড় রাজ্য ও তার আশপাশের কিছু এলাকার- বর্তমানের ভাটি বাংলা যাকে বলে- ভাষা আশ্চর্যরকমভাবে পরিবর্তনের দিক থেকে শ্লথগতিসম্পন্ন বিধায় চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রটি আজও অক্ষুণ্ণ আছে। এই কারণেই সুনামগঞ্জের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চর্যাপদ কর্তাগণের উল্লেখযোগ্য অংশের বসবাস ছিল এবং তাঁদের উত্তরসূরীর মানসপুত্র অথবা ভাবশিষ্য অসংখ্য বৈষ্ণব-বাউলেরা এখনও এখানকার প্রকৃতি ও সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে বিরাজ করেন। বাংলাদেশের অন্যত্র এমনটি বিরল দৃশ্য। আহমদ শরীফ যখন বলেন, ‘চর্যাপদের দেশেই বৈষ্ণব-বাউলের উদ্ভব, তখন মনে হয় চর্যাপদের দেশ বলতে সুনামগঞ্জকেই (sunamganj) বুঝানো হয়েছে’।

সুনামগঞ্জ (sunamganj) জেলার জনগণ সাধারণত বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তবে জগন্নাথপুর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় জনগণ নিজেদের মধ্যে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন অঞ্চল যেমন সিলেট অঞ্চল, ময়মনসিংহ অঞ্চল, কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

সুনামগঞ্জ (sunamganj) জেলার অধিবাসীরা সাহিত্য চর্চায় সিলেট বিভাগের পথিকৃৎ, এটা অত্যুক্তি নয়। শুধু বাংলা ভাষাতেই নয় এ জেলার অধিবাসীরা মোট সাতটি বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য রেখেছেন। এটিও এ জেলার অন্যতম রেকর্ড বলে মনে করি। পনের’শ শতাব্দী থেকে শুরু এ যাবৎ সুনামগঞ্জবাসীরা যে সমস্ত ভাষায় সাহিত্য রচনা করে গেছেন, সেগুলো হলো-(১) সংস্কৃত (২) বাংলা (৩) সিলেটি নাগরী (৪) আরবি (৫) ফার্সি (৬) উর্দু ও (৭) ইংরেজি।

সংস্কৃতি:

অসংখ্য হাওর-বাওর, নদীনালা, খালবিলে পরিবেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জ। এ জনপদে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সরব উপাদান। আউল-বাউলের চারণভূমি সুনামগঞ্জ (sunamganj) তাঁর ঐতিহ্যের ধারা থেকে আজও বিচ্যুত হয়নি। লোকসাহিত্যে মহাভারতের অনুবাদক মহাকবি সঞ্চয় (পঞ্চদশ শতক), কুবের আচার্য্য, ঈশান নাগর (বৈষ্ণব কবি)দিব্য সিংহ (লাউর রাজ্যের স্বাধীন রাজা)থেকে শুরু করে সৈয়দ শাহনূর, সৈয়দ হোসেন আলম, রাধারমণ, হাছনরাজা, দুরবীণ শাহ, কালাশাহ, ছাবাল শাহ, এলাহী বক্স মুন্সী, শাহ আছদ আলী, পীর মজির উদ্দিন, আফজল শাহ, শাহ আবদুল করিম এ মাটির সন্তান। আধুনিক সাহিত্যে, গল্প-উপন্যাসে শাহেদ আলী, ঝর্ণাদাস পুরকায়স্থ, কবিতায় প্রজেশ কুমার রায়, মুতাসিম আলী, মোহাম্মদ সাদিক, আশরাফ আহমদ, ইকবাল কাগজী, মমিনুল মউজদীন, শামীম লুৎফর, গীতসাহিত্যে মনিরুজ্জামান মনির, দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরী, সঙ্গীতে উজির মিয়া, নির্মলেন্দু চৌধুরী, এমরান আলী, শফিকুন্নর নুর, সাবিবর আহমদ সোহেল, নাটকে তরনী কান্ত দে, মোদাবিবর আলী টুনু, শাহ আবু তাহের, সদ্য প্রয়াত গোলাম রব্বানী, শিল্পকর্মে ধ্রুব এষ, সাংবাদিকতায় ফজলুল হক সেলবর্ষী, মকবুল হোসেন চৌধূরী, মুনাওর আলী, ইছাক আলী, হাসান শাহরিয়ার, সাকির আহমদ,শিক্ষায় মোহাম্মদ আলী, আব্দুল মন্নান চৌধুরী, আলী ফরিদ আহমদ, আব্দুল কাইয়ূম, সমাজসেবায় হাজী মকবুল হোসেন পুরকায়স্থ, সতীশ চন্দ্র রায়, দিগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, ক্রীড়ায় সমশের আলী, আছদ্দর আলী ভূঁইয়া, কন্টর মিযা, নাজির আহমদ চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।

সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসুনামগঞ্জের (sunamganj) পল্লী ও লোক সংস্কৃতিতে আমরা পাই মাঝির ভরাট গলার গান, রাখালের বাঁশির সুর। এছাড়া হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অসংখ্য আউল, বাউল, পীর, ফকির, দরবেশ, বৈষ্ণব-সন্ন্যাসীদের অসংখ্য সৃষ্টিশীল গান যা মানুষকে পরমেশ্বরের সন্ধান পেতে সাহায্য করে। এগুলোও আমাদের এক মূল্যবান রত্নভাণ্ডার। বার মাসে তের পার্বণে ভরপুর হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তাদের রয়েছে বিভিন্ন বর্ত, মেলা ও উৎসবাদি। মুসলিম সম্প্রদায়ের রয়েছে গাজির গীত, মুহররমের গান, মর্সিয়া, কাওয়ালী ইত্যাদি। এছাড়া এখানকার লাঠি খেলা ও নৌকা দৌড় এককালে খুবই জনপ্রিয় ছিল। আজো এর রেশ শেষ হয়ে যায়নি। থিয়েটার, নাটক, যাত্রা ও কবি গানের লড়াই তো আছেই। এক কথায় জারি সারি ভাটিয়ালীর দেশ আমাদের সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিতে যাঁরা সম্মানিত করতে অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে হাছন রাজা, রাধারমণ, দূর্বীণ শাহ, শাহ আব্দুল করিম, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, মহসিন রেজা চৌধুরী, মনিরুজ্জামান মনির, নির্মুলেন্দু চৌধুরী, আব্দুল হাই, ব্রহ্মানন্দ দাস, লালানিরেন্দু দে, বিপিন পাল, ক্ষীরোদ শর্মা, তরণী কান্ত দে, ছাদির উদ্দিন আহমদ, শাহ আবু তাহের প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য

পনাতীর্থঃ হিন্দুধর্মের সাধক পুরুষ অদ্বৈত মহাপ্রভুর মা লাভা দেবীর গঙ্গা স্নানের খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শারীরিক সামর্থ্যের অভাবে ইচ্ছা পূরণের সম্ভাবনা ছিল না। অদ্বৈত মহাপ্রভূ তার মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য যোগসাধনা বলে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থের পূ্ণ্য জল এক নদীতে এক ধারায় প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন। এই জলধারাই পুরনো রেনুকা নদী বর্তমানে যা যাদুকাটা নদী নামে প্রবাহিত। তাহিরপুর থানার এই নদীর তীরে পনাতীর্থে প্রতি বৎসর চৈত্র মাসে বারুণী মেলা হয়। এই মেলা বারুণীযোগ নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত। প্রতি বৎসর লাখো হিন্দু পূণ্যার্থীর সমাবেশ ঘটে এই বারুণী মেলায়। অনেক মুসলমানও এই মেলা দেখার জন্য পনাতীর্থ যান । আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।

হাছন রাজা মিউজিয়াম(জন্ম ১৮৫৪ মৃত্যু ১৯২১ খ্রিঃ) সুনামগঞ্জ পৌরসভা এলাকার তেঘরিয়ায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে হাছন রাজার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। এ বাড়িটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। হাছন রাজা মূলত ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার। মরমী সাধক হাছন রাজা জীবনে অসংখ্য গান রচনা করে আজ অবধি লোকপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেছেন। কালোত্তীর্ণ এ সাধকের ব্যবহৃত কুর্তা, খড়ম, তরবারি, পাগড়ি, ঢাল, থালা, বই ও নিজের হাতের লেখা কবিতার ও গানের পাণ্ডুলিপি আজও বহু দর্শনার্থীদের আবেগ আপ্লুত করে। এই মরমী কবির রচিত গানে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছন রাজাকে পত্র মাধ্যমে অভিনন্দন ও প্রশংসা জানিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাধীন গাজীর দরগা নামক পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয়তম মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন মরমী কবি হাছন রাজা। হাছন রাজার মাজার দেখার জন্য প্রতি বৎসর বহু দর্শনার্থীর সমাগম হয়।

ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ: যে স্থানটিতে গেলে মুহূর্তেই ৪৮ জন মহান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় অন্তত চোখে ভাসে তার নাম ডলুরা। পাহাড়ের পাদদেশে চলতি নদীর তীরে লুকায়িত আছে সেই একাত্তরের রক্তত্যাগ সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের (sunamganj) ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সীমান্তবর্তী ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জের অন্যতম রণাঙ্গন। এই রণাঙ্গনটি ছিল ৪ নং বালাট সেক্টরের অধীন। উক্ত রণাঙ্গনে সম্মুখসমরে যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন তাদের কয়েকজনকে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে ৪৮ জন শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ডলুরা শহীদ মাজার।

অর্থনীতি

মাথাপিছু আয় ৩৫৯০ ডলার।কৃষি নির্ভর অর্থনীতি।অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।ধান উৎপাদনে এ জেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে সমগ্র বাংলাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশ খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। মূলতঃ পাথর শিল্প, মৎস্য, ধান, সিমেন্ট শিল্প

ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এ জেলা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদেরও সবচেয়ে বড় আধার। উন্নত মানের বালু, চুনাপাথর, নুড়ি পাথর প্রভৃতি খনিজ সম্পদেও সমৃদ্ধ এ জেলা। মূলত ভৌগলিক অবস্থার কারনে সুনামগঞ্জ (sunamganj) জেলার যোগাযোগসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোর তেমন উন্নয়ন হয়নি। পূর্বে জেলা সদরের সাথে মাত্র একটি উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে সদরের ২ টি সহ মোট ৬ টি উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে। এখনও ৫ টি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে লোকজনকে পায়ে হেটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে যে কোন পরিকল্পনা কিংবা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

প্রাকৃতিক সম্পদ

সুনামগঞ্জ (sunamganj) জেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।এ জেলা ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। এ জেলার অধিবাসীদের চাহিদা পূরণ করে প্রতিবছর ধান আশেপাশের জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।এ জেলা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদেরও সবচেয়ে বড় আধার। সুনামগঞ্জ জেলার হাওরগুলো দেশের মৎস্য সম্পদের একটি বড় উৎস। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ হাওরের বিখ্যাত মাছের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় মহাশোলের কথা। মাছটির দুটো প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Tortor এবং Torputitora, টাঙ্গুয়ার হাওরে দুই প্রজাতিই পাওয়া যেত।

বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের খনিজ সম্পদেও এ জেলা সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের খনিজ সম্পদের মধ্যে অন্যতমঃ

ক) উন্নত মানের বালু

খ) চুনাপাথর

গ) নুড়ি পাথর

ঘ) কয়লা প্রভৃতি

নদ-নদী

সুনামগঞ্জ (sunamganj) জেলায় অনেক নদ-নদী রয়েছে। এ জেলার অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভৌগলিক অবস্থান সমগ্র বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এ জেলাকে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। জেলার বেশির ভাগ অঞ্চলই হাওর, বাওর, ও অপেক্ষাকৃত নীচু অঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং বৎসরের প্রায় ৭/৮ মাস জলমগ্ন থাকে। বর্ষার সময় এখানে সমুদ্রের মত ঢেউ খেলে এবং গ্রামগুলোকে মনে হয় এক একটি ছোট ছোট দ্বীপ। অনেক ছোট ছোট নদী ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা- কুশিয়ারায় পতিত হয়েছে। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল চেরাপুঞ্জি এ জেলার উত্তর প্রান্ত থেকে মাত্র প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরে। তাই এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশী।

এ জেলায় মোট ২৬টি ছোট বড় নদ-নদী রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার নদ-নদীর মধ্যের উল্লেখযোগ্যঃ

ক) সুরমা

খ) কুশিয়ারা

গ) কালনী

ঘ) চলতি

ঙ) যাদুকাটা

চ) রক্তি

ছ) মরাচেলা

ঝ) খাসিয়ামারা

ঞ) বৌলাই

ট) পাটলাই

ঠ) দাড়াইন

যোগাযোগ ব্যবস্থা

হাওর বেষ্টিত অঞ্চল বিধায় সুনামগঞ্জ (sunamganj) আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রধানত নৌপথ কেন্দ্রিক। এ জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৬টি উপজেলার (ছাতক, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর) জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ রয়েছে।  বাকী ৪টি উপজেলার (বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার) সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। এর মধ্যে অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা যা বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। তখন নৌপথই একমাত্র অভ্যন্তরীন যোগাযোগ মাধ্যম হয়।

হাওড় বেষ্টিত জেলা সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে এ জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যকোন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রচলন নেই বললেই চলে। রাজধানীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে এ জেলায় আসতে হলে ট্রেনে/বিমানে সিলেট এসে তারপর সড়ক পথে প্রায় ৭০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে হয়।

  • সড়ক যোগাযোগ

সড়ক যোগাযোগ সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কটিই জেলার সড়ক যোগাযোগের প্রধানতম পথ। এ পথেই রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা হয়। সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা হয়ে নেত্রকোনা জেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের নিমিত্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্প নির্মাণাধীন।

এছাড়া সুনামগঞ্জ-ছাতক আঞ্চলিক সড়ক, সুনামগঞ্জ-দিরাই আঞ্চলিক সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর আঞ্চলিক সড়ক, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়কের মাধ্যমে জেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে উপজেলাগুলো।

  • রেল যোগাযোগ

জেলার ছাতক উপজেলার সাথে সিলেটের রেল যোগাযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনে সিলেট-ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ পরিকল্পনাধীন।

  • নৌ যোগাযোগ

প্রাচীন কাল থেকে সুনামগঞ্জের সাথে ঢাকা শহরের নৌ যোগাযোগ ছিল। সুরমা নদী হয়ে এ যোগাযোগ এখনো অব্যাহত আছে।

সুনামগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম মিউজিয়াম ধল

  • শাহ আরেফিন মাজার
  • টাঙ্গুয়ার হাওর
  • শিমুল বাগান
  • নীলাদ্রি লেক
  • সিরাজ উদ্দীন লেক
  • হাসন রাজার বাড়ি
  • নারায়ণতলা
  • সৈয়দপুর গ্রাম
  • নারায়ণতলা মিশন
  • পণতীর্থ স্মৃতি ধাম
  • বাঁশতলা শহীদ স্মৃতিসৌধ
  • লাউড়েরগর
  • ডলুরা স্মৃতি সৌধ
  • টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প
  • সুখাইড় জমিদার বাড়ী
  • শাহ কালাম কোহাফাহ্‌(রহ.)-এর রওজা
  • পাইলগাঁওয়ের জমিদার বাড়ি
  • গৌরারং জমিদার বাড়ি
  • হাওলি জমিদার বাড়ি
  • পানাইল জমিদার বাড়ি
  • বাউল আব্দুল করিম স্মৃতি যাদুঘর

সুনামগঞ্জ জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

  • বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম (একুশে পদক পাপ্ত)
  • সৈয়দ শাহনুর, (১৭৩০- ১৮৫৪) একজন বাংলাদেশী মরমী কবি ও সাহিত্যিক। তিনি সাধক কবি ও পীর হিসেবে সমধিক পরিচিত।
  • রাধারমণ দত্ত, বা রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ (১৮৩৩ – ১৯১৫) হলেন একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক বৈঞ্চব কবি, ধামালি গান ও নৃত্যের প্রবর্তক।
  • হাসন রাজা, (২১ ডিসেম্বর, ১৮৫৪ – ৬ ডিসেম্বর, ১৯২২) বাংলাদেশের একজন মরমী কবি এবং জমিদার ।
  • দুর্বিন শাহ, মরমী কবি।
  • কামাল উদ্দিন মরমী সাধক, গীতিকার।

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here