বড় কাটরা ( boro katra )
বড় কাটরা (boro katra) ঢাকায় চকবাজারের দক্ষিণে অবস্থিত মুঘল আমলের একটি সরাইখানা। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪৪ থেকে ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে দিওয়ান (প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা) মীর আবুল কাসিম দ্বারা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। তিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারনে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল। যেখানে এই মুসাফির খানার নির্মাতা ও এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়। ফলকে লেখা ছিল:
সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল- যাহাতে এইগুলির আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপ্রাধী শেষ বিচার দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল।
বড় কাটরার স্থাপত্য
বড় কাটরার (boro katra) বিল্ডিংটি মধ্য এশীয় সরাইখানার ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন অনুসরণ করে এবং মোগল স্থাপত্য অনুযায়ী শোভিত। মূলত এটি একটি চতুষ্কোণ অঙ্গন ঘেরা স্থাপত্য।
দক্ষিণ শাখাটি ৬৭.৯৭ মিটার প্রসারিত এবং বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তর বাহুও একই মাপের ছিল বলে ধারণা করা হয়। পূর্ব-পশ্চিম বাহুর দৈর্ঘ্য এখন নিরূপণ করা দুঃসাধ্য হলেও আদিতে ৭০.১০ মিটার করে ছিল বলে জানা যায়। তিনতলা বিশিষ্ট এ সদর তোরণ ছিল অতি মনোমুগ্ধকর এবং এটি দক্ষিণে নদীর দিকে প্রায় ৭.৬১ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১২.১৯ মিটার প্রসারিত ছিল।এ প্রবেশপথের দুপাশে ছিল দুটি প্রহরীকক্ষ। প্রহরীকক্ষ দুটির আয়তন ছিল পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ৫.৫১ × ২.৯২ মিটার। এ প্রবেশপথের পরে ছিল পরপর তিনটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আয়তনের প্রবেশপথ। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা প্রবেশপথের আয়তন ছিল যথাক্রমে ২.৭৪ × ০.৯১ মি. , ৩.৩৫ × ১.৮২ মি, এবং ২.৭৪ × ১.৮২ মি.।
বড় কাটরার বর্তমান অবস্থা
অতীতের অবকাঠামোর সাথে সংযুক্ত করে বর্তমানে আরও নতুন ভবন সংযোজন করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করছে। মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে শুধুমাত্র বড় কাটারার মূল গেইটসহ কিছু ভবন রয়েছে। অন্যগুলো বেদখল হয়ে গেছে। স্থাপনা ভবনটি সময়ের পরিবর্তনে সংস্কারের অভাবে অতীত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। স্থাপনা প্রাঙ্গনে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লাইব্রেরী রয়ছে। এখানে কোন জাদুঘর নেই।
দর্শণ
মাদ্রাসার প্রবেশ দরজা দিয়ে বিনা পয়সায় এক সময়ের বড় কাটরাতে প্রবেশ করা যায়। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে এই ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পারে। এটি প্রতিদিনই সকাল ৮.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বর্তমানে বড় কাটরা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে বিদেশী ও দেশী দর্শনার্থীরা এই স্থাপনা ঘুরে দেখেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারে বড় কাটরা।
বিবিধ
রাস্তা খুবই সরু বলে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানে কোন প্রকার ফুড কর্ণার নেই।
বড় কাটরার কিছু ছবি
বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন।