মেহেরপুর জেলার আমঝুপি নীলকুঠি

0
401

Amjhupi Neelkuthi

আমঝুপি নীলকুঠি (Amjhupi Neelkuthi) মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত তৎকালীন ইংরেজ নীলকুঠি ও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি মেহেরপুর জেলা থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে আমঝুপি নামক গ্রামে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে কাজলা নদী।

৭১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মেহেরপুর জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে মেহেরপুরের আমঝুপি ঐতিহাসিক নীলকুঠি।

এই নীলকুঠির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনামলের নির্মম ইতিহাস। সেই স্মৃতি ও ইতিহাসকে ধরে রাখতেই আমঝুপি নীলকুঠি বাড়িকে একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যেই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশিরাও আসছেন তৎকালীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার এই কুঠি বাড়িতে।

এ দিকে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমঝুপি নীলকুঠিকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে গড়ে তোলা হবে।’

মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, এ অঞ্চলে আম গাছের সমারোহ এবং ঝোপঝাড়ের আধিক্য থাকায় এর নাম হয়েছে আমঝুপি।

জানা যায়, ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মেদ এখানে আসেন এবং আমঝুপি নামের সার্থকতা রক্ষায় প্রচুর আম গাছ রোপণ করেন। এরপর তিনি এখানকার নীলকুঠিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এ দিকে, আমঝুপি নীলকুঠির (Amjhupi Neelkuthi) সামনে বাঁধাই করা ‘আমঝুপির স্বর্ণালি ইতিহাস’ থেকে জানা যায়, ১৯৭৮ সালের ১৩ মে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের আমঝুপি অধিবেশনের সভায় এক সময়কার নীলকুঠি বা রূপান্তরিত এই কাচারিটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় ১৯৭৯ সালে।

ব্রিটিশ শাসনামলে আমঝুপি নীলকুঠি ছিল নীলকরদের ইতিহাস ও তাদের অত্যাচারের অন্যতম সাক্ষী। বাংলাদেশে ব্রিটিশ রাজত্বকালে ইংরেজরা সেসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে নীল চাষ করার জন্য যেসব কুঠি গড়ে তুলেছিলেন, সেসব কুঠিবাড়িই নীলকুঠি নামে পরিচিত। তার মধ্যে মেহেরপুরে রয়েছে বেশ কিছু নীলকুঠি। যেগুলোর মধ্যে আমঝুপি নীলকুঠি অন্যতম। আমঝুপি যে শুধু নীল চাষ আর নীলকরদের অত্যাচার নির্যাতনের কাহিনীতে ভরা এমনটা নয়। এর বাইরেও এখানে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় যেমন রচিত হয়েছে, তেমনি রয়েছে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল জেগে ওঠার গল্পগাঁথা।

নীলকুঠিতে টাঙানো সাইনবোর্ডের লেখা থেকে জানা যায়, মোঘল সেনাপতি মানসিংহ এবং নবাব আলীবর্দি খাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই আমঝুপিতেই পলাশীর পরাজয়ের নীলনকশা রচিত হয়েছিল। কথিত আছে, এই নীলকুঠিতেই ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ ও মীরজাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের শেষ বৈঠক হয়েছিল। যার পরের গল্প শুধু অত্যাচার আর নির্যাতনের। আর আমঝুপি ষড়যন্ত্রের ফলাফল সিরাজ-উদ-দৌলার পতন। পাশাপাশি এই ফলাফলের মাধ্যমে বাঙালিদের স্বাধীনতা হারিয়ে গ্রহণ করতে হয় পরাধীনতাকে। তারপরের সেই অত্যাচারের বিভীষিকাময় ফলশ্রুতিতে রক্তের বন্যার মধ্য দিয়ে একদিন আমঝুপিতে গড়ে উঠল নীলকুঠি।

বাংলাদেশে নীলচাষ শুরু হয় ১৮১৫ সালে। এর কিছুদিন পরই আমঝুপির নীলকুঠির গোড়াপত্তন। আমঝুপি নীলকুঠির (Amjhupi Neelkuthi) ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এখানে সমানে অত্যাচার করে গেছে কেনি, সিম্পসন, ফারগুনরা। সে অত্যাচারের একমাত্র সাক্ষী এই আমঝুপি কুঠিবাড়ি। আবার গৌরবগাঁথা হচ্ছে, বঞ্চিত ও অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার এসব নীল চাষিরাই এক সময় দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজদের পরাজিত করে বন্ধ করে নীলচাষ।

এরপর নীলকুঠি বন্ধ হয়ে সেটি রূপান্তরিত হয় মেদীনিপুর জমিদারের কাচারিতে। পরবর্তীকালে দেশভাগ হলে উচ্ছেদ হয় জমিদারি প্রথার। এই কুঠিই স্মৃতি ধরে আছে ইংরেজ কুঠিয়াল কেনি, সিম্পসন, জেমস হীল, ফারগুন ক্রাফোর্ড, ওয়ার্টস, হেমিলটনের অত্যাচার-নির্যাতন আর শোষণের কাহিনী।

কাজলা নদীর কোল ঘেঁষে সবুজ শ্যামলে ঘেরা ৭৭ একর জমির উপর অবস্থিত এই কুঠিবাড়ি। বর্তমানে এই ঐতিহাসিক আমঝুপি কুঠিবাড়ির আশপাশে আম্রকানন সৃষ্টিসহ গড়ে তোলা হয়েছে মনোরম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়া নীলকুঠির সামনে আমবাগান ও দক্ষিণ পশ্চিম পাশে নীলকুঠির কর্মকর্তাদের প্রার্থনার জন্য একটি চার্চের ভঙ্গুর অংশ রয়েছে। মোট ৭৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও কুঠিবাড়িটির বেশ কিছু জায়গা ভূমিহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন কিছুটা কমে গেছে।

কুঠির ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলে সামনে পড়ে একটি বড় ভবন। ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এই মূল ভবনটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসেবে। এই ভবনটিতেই এক সময় লর্ড ক্লাইভের অফিস বা কাচারি ছিল। নীলকুঠি থেকে হাতের বাম দিকে রয়েছে বিশাল মাঠ। যার পাশ ধরেই বয়ে চলেছে কাজলা নদী। ইতিমধ্যেই নদীর পাশে লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি নীল গাছ।

২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজলা নদীর ধারের নীলকুঠি বাড়িটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এরপর ২০১৭ সালের শুরুর দিকেই শুরু হয় এর কাজ। ইতোমধ্যে কুঠিবাড়ি ঘিরে কৃত্রিম লেক, ঝর্ণাধারা, বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিমূর্তি, খেলাধুলার সরঞ্জাম, পানি ও পয়-নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ চলাচলের রাস্তা ও বাহারি সব ফুলের বাগান করা হয়েছে এখানে।

এখানে আরও রয়েছে ১৮টি রেনট্রি, ১৪০টি নারিকেল ও ৫৪টি পেয়ারা গাছ। সবুজ শ্যামলে ঘেরা আমঝুপি কুঠিবাড়ি নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর বিভিন্ন সরকার প্রধানরা আগ্রহ দেখিয়েছেন। বর্তমানে কুঠিবাড়ির পূর্ব পাশে নির্মিত হয়েছে একটি পিকনিক কর্নার। বিএনপি সরকারের আমলে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আম্রকানন সৃষ্টিসহ মনোরম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এখানে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা এখানে পিকনিকে আসেন। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারাও যাতে এখানে এসে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন সেজন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

যেভাবে যাবেন :

ঢাকা থেকে জে আর পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, চুয়াডাঙা ডিলাক্স, এস এম পরিবহণ, রয়েল এক্সপ্রেসের বাস এই রুটে যাতায়াত করে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

মেহেরপুর জেলা সদর থেকে কুঠি বাড়ির দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। বাস, স্থানীয় যান টেম্পো/নছিমন/করিমন এর সাহায্যে ২৫ মিনিট সময়ে আমঝুপি নীলকুঠিতে পৌঁছনো যায়। এছাড়া রয়েল এক্সপ্রেস ও জে আর পরিবহণে এসি বাস রয়েছে।ভাড়া ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা।

আমঝুপির নীলকুঠির কিছু ছবি 

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here