চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পরিচিতি

1
2019

চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত এই জেলাটিকে কখনো নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাই নামেও ডাকা হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভাগের আগে এটি মালদহ জেলার একটি অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে এটি মালদহ থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্থানে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং রাজশাহী জেলার একটি মহাকুমা হিসেবে গন্য হয়। ১৯৮৪ সালে একটি একক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কে ‘আমের দেশ’ বলেও জানে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইতিহাস ও জেলার পটভূমি ( chapainawabganj )

নামকরণ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) নামটি সাম্প্রতিককালের। ইতোপূর্বে এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ’ নামে পরিচিত ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, প্রাক-ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান  সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পারিষদসহ এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। বলা হয়ে থাকে যে, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সরফরাজ খাঁ (১৭৩৯-৪০ খ্রি) একবার শিকারে এসে যে স্থানটিতে ছাউনি ফেলেছিলেন সে জায়গাটিই পরে নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। তবে অধিকাংশ গবেষকের মতে, নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলে (১৭৪০-৫৬ খ্রি) নবাবগঞ্জ নামকরণ হয়।

অষ্টাদশ শতকের প্রথম ও মধ্যভাগে বর্গীর ভয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকজন ব্যাপকভাবে এ এলাকায় এসে বসতি স্থাপনের ফলে স্থানটি এক কর্মব্যস্ত জনপদে পরিণত হয়। কালক্রমে নবাবগঞ্জের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নবাবগঞ্জের ডাকঘর চাঁপাই গ্রামে অবস্থিত হওয়ায় নবাবগঞ্জ তখন ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ নামে পরিচিত হয়।

ইতিহাসসূত্রে এই ‘চাঁপাই’ নামকরণের কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এ ব্যাপারে দুরকম জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে:-

১. বর্তমান নবাবগঞ্জ শহর থেকে ৫/৬ মাইল দুরে মহেশপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। নবাব আমলে এই গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে‘চম্পারাণী’ বা ‘চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজি বাস করতেন। তাঁর নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবদের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠেন। তাঁর নামানুসারে এই জায়গার নাম ‘চাঁপাই’ হয় বলে অনেকে মনে করেন।

২. ‘চাঁপাই’ নামকরণের আর একটি প্রচলিত মত হচ্ছে-এ অঞ্চল রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল। লখিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক। কিন্তু এই চম্পক নগরীর প্রকৃত অবস্থান কোথায় ছিল এ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যা হোকনবাবগঞ্জ জেলায় চসাই, চান্দপুর, বেহুলা গ্রাম ও বেহুলা নদীর সন্ধান পাওয়া যায়। বেহুলা নদী বর্তমানে মালদহ জেলায় প্রবাহিত হলেও দেশবিভাগ-পূর্বকালে  চাঁপাই, মালদহ জেলার অধীনে ছিল। ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১-১৯৩০ খ্রি) মনে করেন, বেহুলা তার স্বামীকে ভেলায় নিয়ে মহানন্দার উজান বেয়ে ভেসে গিয়ে ছিলেন। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর (১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি) ‘বাঙলা সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বর্ণিত লাউসেনের শত্রুরা জামুতিনগর দিয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। বর্তমান ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া পূর্বে জামুতিনগর নামে পরিচিত ছিল। এসবের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলে স্থির করেছেন এবং মত দিয়েছেন যে, চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই নামের উৎপত্তি।

তেভাগা আন্দোলন

নাচোলে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পদ্মা-মহানন্দা-পুনর্ভবার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) ছিল মধ্যযুগের মুসলিম বাংলার প্রাণকেন্দ্র গৌড় নগরীর এক অগ্রসর জনপদ। ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এই জনপদ কখনোই বাংলার শাশ্বত প্রতিবাদমুখর ঐতিহ্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি ; বরং স্বদেশী ও ভিনদেশী সব রকমের শোষণ, নিপীড়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে এখানকার বরেন্দ্রভূমি চিরকাল স্বাধীনচেতা মানুষের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংঘটিত নীল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাকিস্তান আমলে নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং এমনকি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী (chapainawabganj) তাদের বিদ্রোহী ও অধিকারসচেতন সত্তার প্রমাণ দিয়েছেন।

প্রাচীনকালের চাঁপাইনবাবগঞ্জ (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৪ খ্রি):

ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদগণ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ এবং দার্জিলিং ও কোচবিহারসহ গঠিত সমগ্র অঞ্চলকে বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই এলাকাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন অঞ্চল বলে মনে করার আরেকটি কারণ হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলেই সবচেয়ে প্রাচীন পুরাকীর্তি ও প্রত্নবস্ত্তর সন্ধান পাওয়া গেছে। আর বরেন্দ্রভূমির ইতিহাসের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ইতিহাস জড়িত। একসময় উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ এলাকা পুন্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধারণা করা হয়, এই পুন্ড্রবর্ধনই পরবর্তীতে গৌড় নামে পরিচিত হয়ে উঠে। পর্যটক ইবনে বতুতার বিবরণী থেকে জানা যায় যে, এই শহর গঙ্গা ও করতোয়া নদীদ্বয়ের মধ্যে কোনো স্থানে অবস্থিত ছিল। অবশ্য গৌড় রাজ্য সম্পর্কে কিংবদন্তীর অন্ত নেই। ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকের জৈনদের গ্রন্থে প্রদত্ত বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মালদহ জেলার লক্ষ্মণাবতী গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভবিষ্যপুরাণে বা ত্রিকান্ডশেষ গ্রন্থে গৌড়কে পুন্ড্র বা বরেন্দ্রর অন্তর্গত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পঞ্চগৌড়ের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ব্রজতরঙ্গিনী’ গ্রন্থে পরবর্তীতে বহু গ্রন্থে পঞ্চগৌড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে গৌড়, সারস্বত, কনৌজ, মিথিলা ও উৎকল নিয়েই এই পঞ্চগৌড়। কোনো এক সময় মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমানের কিয়দংশ ও মালদহ গৌড়ের অন্তর্গত ছিল । এ নিরিখে পন্ডিতগণ নবাবগঞ্জকে (chapainawabganj) গৌড়ের অংশ হিসেবে মনে করেন।

গৌড়রাজ শশাঙ্কের সময় (আনুমানিক ৬০৬-৬৩৭ খ্রি) গৌড়ের অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর গৌড় রাজ্য সম্রাট হর্ষবর্ধন ও তাঁর মিত্র কামরূপরাজ ভাস্করবর্মার অধীনে চলে যায়। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর বহিঃশত্রুর ক্রমাগত আক্রমণের ফলে গৌড়ের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে ‘মাৎস্যন্যায়’ নামের শতবর্ষব্যাপী এক অন্ধকার ও অরাজক যুগের সূচনা হয়। অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গৌড় রাজ্যে মাৎস্যন্যায় যুগের অবসান ঘটে প্রথম পাল রাজা গোপালের (আনুঃ ৭৫০-৭৭০ খ্রি) ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে। বাংলায় পাল শাসন প্রায় তিন শতাব্দীকাল স্থায়ী হয়েছিল। এরপর কর্ণাটক থেকে আগত ও রাঢ় অঞ্চলে বসবাসকারী সেন বংশ গৌড়ের সিংহাসন অধিকার করে।

মুসলিম শাসনামলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (১২০৪-১৭৫৭ খ্রি):

ভাগ্যান্বেষী তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জয় করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা ঘটে। মুসলিম আমলে গৌড় নগরী ‘লখনৌতি’ (লক্ষণাবতী) নামে পরিচিতি লাভ করে। ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনামলে বাংলাভাষী সমগ্র ভূখন্ড ‘বাঙ্গালা’ নামের একক রাষ্ট্রের অধীনে আসে। তবে গৌড় তথা বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ ধরা হয় হোসেন শাহী বংশের শাসনকালকে। আর স্বাভাবিকভাবেই গৌড়ের পাদভূমি হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) জনপদ তখন অভাবনীয় বৈষয়িক সমৃদ্ধি অর্জন করে। মধ্যযুগের বাংলার শ্রেষ্ঠ নরপতি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি) রাজত্বেই মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়। আর সেই গৌরবের সাক্ষী হিসেবে আজও টিকে আছে গৌড়ের বিখ্যাত ছোট সোনামসজিদ।

১৫৭৬ খ্রি: মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা বিজয়ের পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের বেশিরভাগ এলাকা মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার কিছু কিছু এলাকায় তখন বার ভুঁইয়ারা মুঘলবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যা হোক, মুঘল সুবাদারদের মধ্যে শাহাজাদা মুহম্মদ সুজার (১৬৩১-৫৯ খ্রি) বেশ কিছু কীর্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জে (chapainawabganj) রয়েছে। তাঁর কাছারী বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার ফিরোজপুরে। তাঁর সময় গৌড়ের পূর্বাঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রঃ) এখানে আসেন। সুবাদার সুজা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা জানান। পরে শাহ নেয়ামতুল্লাহ গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে আস্তানা স্থাপন করেন।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রি) পর থেকে মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন থেকে বাংলা নবাবদের অধীনে একটি স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তার মর্যাদা ভোগ করতে থাকে। নবাব মুর্শিদকুলি খানের (১৭১৭-১৭২৭ খ্রি) সময় বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে স্থানান্তর করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসা হয় যা ভৌগোলিক দূরত্বের দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকতর নিকটবর্তী। পূর্বেই বলা হয়েছে, নবাবি আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা নবাবদের মৃগয়াভূমি হিসেবে মুর্শিদাবাদের অভিজাত মহলে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে এবং ‘নবাবগঞ্জ’ নামটি মূলত ঐ সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ব্রিটিশ যুগ (১৭৫৭-১৯৪৭ খ্রি):

১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা-ভারতে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের বীজ রোপিত হয়। বাংলার রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক রূপান্তর ঘটে এবং নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদের পশ্চাদভূমি হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যে গুরুত্ব বহন করত, তাতে ভাটা পড়ে। তবে এ কথাও সত্যি যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বর্তমানে আমরা যে গ্রামীণ ও শহুরে জনপদ কাঠামো দেখতে পাই তার সিংহভাগই ব্রিটিশ যুগে তৈরি। অবশ্য নবাবগঞ্জ অঞ্চলের ইতিহাস খুব প্রাচীন হলেও নবাবগঞ্জ থানা শহর ও মহকুমা শহরের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে পুর্ণিয়া ও দিনাজপুর জেলা ভেঙ্গে মালদহ জেলা গঠিত হয়, কিন্তু ১৮৫৯ খ্রিঃ পর্যন্ত এটিকে কোন কালেক্টরের অধীনে দেয়া হয়নি। Mr. Ravan Show ছিলেন মালদহ জেলার প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর। এ সময় শিবগঞ্জ ও কালিয়াচক থানাদ্বয় অপরাধপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে কুখ্যাত ছিল। নবাবগঞ্জ তখন শিবগঞ্জ থানার অধীনে একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিল মাত্র। ১৮৭৩ খ্রিঃ মুন্সেফ চৌকি শিবগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জে স্থানান্তরিত হয় এবং তারও কিছুদিন পর ১৮৯৯ খ্রিঃ নবাবগঞ্জ থানায় উন্নীত হয়। থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নবাবগঞ্জ ও তার পার্শ্ববর্তী থানাগুলো নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহকুমা গঠনের পরিকল্পনা ও প্রয়াস চলতে থাকে। ১৮৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত নবাবগঞ্জ (chapainawabganj) অঞ্চল রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ১৮৭৬-১৯০৫ খ্রিঃ সময়ে বিহারের ভাগলপুরের (বিভাগ) অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতোমধ্যে ১৯০৩ সালে ১২ জন ওয়ার্ড কমিশনারের সমন্বয়ে নবাবগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয়। ১৯০৫ খ্রিঃ বঙ্গভঙ্গের সময় তদানীন্তন পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশসহ এ অঞ্চলটি আবার অঞ্চল রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যদিও তা মালদহ জেলার অন্তর্গত থাকে। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাবগঞ্জে সাবরেজিস্ট্রি অফিস স্থাপিত হলে এখানে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সরকারি কাজকর্মের সুবিধার জন্য ‘চাঁপাই’ গ্রামে অবস্থিত ডাকঘরটি ১৯২৫ সালে নবাবগঞ্জ শহরে স্থানান্তর করা হয় এবং তার নাম রাখা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সে সময় থেকেই নবাবগঞ্জ শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুগ (১৯৪৭-বর্তমান সময়):

১৯৪৭ সালে ভারতবিভাগের সময় র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুসারে নবাবগঞ্জ এবং তার পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর থানাকে মালদহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১৯৪৮ খ্রিঃ ১লা নভেম্বর রাজশাহী জেলার একটি থানা ও দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত পোরশা থানাসহ একটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি হয় এবং নবাবগঞ্জ শহরে মহকুমা সদর দপ্তর স্থাপিত হয় । এই নতুন মহকুমার নাম রাখা হয় ‘নবাবগঞ্জ’। নবাবগঞ্জ মহকুমা ঘোষিত হওয়ার পর প্রথম মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আহমদ চৌধুরী, ইপিসিএস (১৯৪৮-১৯৪৯ খ্রিঃ)।
১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসনকে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে থানাগুলোকে উপজেলা এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করেন। এই পদক্ষেপের কারণে নবাবগঞ্জের ৫টি থানা শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ নবাবগঞ্জ মহকুমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রী মেজর জেনারেল এম. শামসুল হক চাঁপাইনবানগঞ্জ জেলা উদ্বোধন করেন। নবাবগঞ্জ জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক নিযুক্ত হন এ. কে. শামছুল হক। তিনি ০১.০৩.১৯৮৪ খ্রিঃ থেকে ০৮.০৮.১৯৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১লা আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন বিশেষ ঘটনাঃ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর অংশগ্রহণ ছিল সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) শহরকে পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। ১০ ডিসেম্বর তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা মহানন্দা নদীর অপর পাড় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হন। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার কাজী নুরুজ্জামানের নির্দেশে প্রায় পঞ্চাশজন যোদ্ধার এই দলের নেতৃত্ব দেন। মহানন্দা তীরের বারঘরিয়া গ্রামে এসে  উপস্থিত  হলেও ১৩ ই ডিসেম্বরের পূর্বে তিনি নদী পার হয়ে শহরে প্রবেশ করতে পারেননি। ঐদিন রাতে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর তাঁর বাহিনীকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে শহর আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি নিজে একটি অংশের নেতৃত্বে থাকেন এবং সহযোদ্ধাদেরকে নিয়ে গভীর রাতে মহানন্দা পেরিয়ে শহরের উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হন। রেহাইচর নামক স্থানে শত্রুসেনাদের সঙ্গে তাঁর লড়াই হয়। বীরদর্পে যুদ্ধ করে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর যখন পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদেরকে রণাঙ্গন থেকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করছিলেন, তখনই শত্রুর নির্মম বুলেট এসে তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়। শহীদ হন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। তাঁর বীরত্বপূর্ণ লড়াই ও সাহসী রণপরিকল্পনার কারণে ১৪ ই ডিসেম্বর তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) শহরকে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন। শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনজাহাঙ্গীরকে ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বীরত্বগাঁথা অমর হয়ে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ তথা বাংলাদেশের মুক্তিপাগল জনগণের হৃদয়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উন্নীত

১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসনকে জনগনের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে থানাগুলোকে উপজেলা এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করেন। এই পদক্ষেপের কারণে নবাবগঞ্জের ৫ টি থানা শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট,  গোমস্তাপুর ও নবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ লা মার্চ নবাবগঞ্জ মহকুমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রী মেজর জেনারেল এম. শামসুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা উদ্বোধন করেন। নবাবগঞ্জ জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক নিযুক্ত হন এ. কে শামছুল হক। তিনি ০১.০৩১৯৮৪ খ্রিঃ থেকে ০৮.০৮.১৯৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১ লা আগস্ট সরকারীভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভৌগলিক পরিচিতি

অবস্থান

বাংলাদেশের মানচিত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জের (chapainawabganj) অবস্থান সর্ব পশ্চিমে। পূর্বদিকে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ জেলা, পশ্চিমে পদ্মা নদী ও মালদহ জেলা এবং দক্ষিণে পদ্মা নদী ও মুর্শিদাবাদ জেলা (পশ্চিমবঙ্গ)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ২৪‘২২ `হতে ২৪‘৫৭ `উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৭‘৫৫ `হতে ৮৮‘২৩ `পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত।

 ভূপ্রকৃতি

ভূ-প্রকৃতি অনুসারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে দুটো ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা ১. বরেন্দ্র অঞ্চল ও ২. দিয়াড় অঞ্চল।

.বরেন্দ্র অঞ্চলঃ মহানন্দা নদীর পূর্ব দিকের এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বরেন্দ্র ভূ-ভাগ বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এলাকা। বঙ্গীয় বদ্বীপ গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূমি গঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর উপজেলার কিছু অংশ এবং নাচোল উপজেলার সমগ্র অঞ্চল বরেন্দ্র এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ধান বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান উৎপাদিত ফসল।

.দিয়াড় অঞ্চলঃ মহানন্দা নদী থেকে পশ্চিম দিকের এলাকা দিয়াড় নামে পরিচিত। গঙ্গা নদীর ক্রমাগত গতিপথ পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চল গড়ে উঠেছে। নদী গঠিত এই এলাকার ভূমি খুব উর্বর। এককালে এই এলাকা রেশম ও নীল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে জেলার অধিকাংশ আমবাগান দিয়াড় অঞ্চলে অবস্থিত।

 নদনদী জলাভূমি

১. পদ্মা-গঙ্গা নদী ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মিত হওয়ার পর থেকে পদ্মায় পানি প্রবাহ কমতে থাকে এবং বিশাল চর জেগে উঠতে থাকে। বর্তমানে পদ্মা তার পূর্বেকার রূপটি হারিয়ে ফেললেও প্রতিবছর বর্ষাকালে সে প্রলয়ঙ্কারী রূপ ধারণ করে।

২. মহানন্দাঃ জেলার ভোলাহাট উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মহানন্দা নদী রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরটি মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত।

৩. পাগলাঃ ভারত থেকে আসা পাগলা নদী শিবগঞ্জ উপজেলার তত্তীপুরে মরাগঙ্গার সাথে মিলিত হয়ে কিছুদূর এগিয়ে মহানন্দায় পড়েছে।

৪. পুনর্ভবাঃ দিনাজপুর থেকে নওগাঁ জেলা হয়ে পুনর্ভবা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

৫. বিল ও জলাভূমিঃ নদ-নদীর পাশাপাশি এ জেলায় রয়েছে বিলভাতিয়া, বিল চুড়ইল, বিল সিংড়া, বিল হোগলা, বিল পুটিমারি, বিল আনইল এবং বিল মরিচাদহ ও বিল কুমিরাদহ এর মত অসংখ্য বিল ও জলাভূমি।

 জলবায়ু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) জেলার জলবায়ু রুক্ষ ও চরমভাবাপন্ন। এখানকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা যথাক্রমে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৮৬ সেন্টিমিটার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলার তথ্যাবলী

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ৫টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলি হলঃ

উপজেলাআয়তন (কিঃমিঃ²)জনসংখ্যা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা৪৫১.৮০৪,৫২,৬৫০
গোমস্তাপুর উপজেলা৩১৮.১৩২,৪০,১২৩
নাচোল উপজেলা২৮৩.৬৮১,৪৬,৬২৭
ভোলাহাট উপজেলা১২৩.৫২১,২০,৪২৯
শিবগঞ্জ উপজেলা৫২৫.৪৩৫,৯১,১৭৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা
ইউনিয়নের তালিকা:আলাতুলী,বারঘরিয়া,মহারাজপুর,রানীহাটি,বালিয়াডাঙ্গা,গোবরাতলা,ঝিলিম,চরঅনুপনগর,দেবীনগর,শাহজাহানপুর,ইসলামপুর, চরবাগডাঙ্গা,নারায়নপুর,সুন্দরপুর

গোমস্তাপুর উপজেলা
ইউনিয়নের
তালিকা: রাধানগর,রহনপুর,বোয়ালিয়া,বাঙ্গাবাড়ী,পার্বতীপুর,চৌডালা,গোমস্তাপুর,আলীনগর

শিবগঞ্জ উপজেলা
ইউনিয়নের
তালিকা:বিনোদপুর,চককির্তী,দাইপুকুরিয়া,ধাইনগর,দুর্লভপুর,ঘোড়াপাখিয়ামোবারকপুর,মনাকষা,নয়ালাভাঙ্গা,পাঁকা, ছত্রাজিতপুর,শাহাবাজপুর,শ্যামপুর,কানসাট,উজিরপুর

নাচোল উপজেলা
ইউনিয়নের
তালিকা: ফতেপুর,কসবা,নেজামপুর,নাচোল

ভোলাহাট উপজেলা
ইউনিয়নের
তালিকা: ভোলাহাট,জামবাড়িয়া,গোহালবাড়ী,দলদলী

অর্থনীতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ (chapainawabganj) জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। তারা মূলত কৃষিকাজ করে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। তার মধ্যে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী আছে যারা মৌসুমের সময় অর্থ উপার্জন করে। তার মধ্যে আম ব্যবসায়ী প্রধান। চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা এই মৌসুমি আম ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার উপযুক্ত স্থান। আমের মৌসুমে এই শিবগঞ্জ উপজেলাহয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য। আমের মৌসুমে এখানে চাঁপাই নবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে যা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না।আম ব্যবসায়ী ছাড়াও এখানে টমেটো ব্যবসায়ী,কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী, পান ব্যবসায়ী দেখতে পাওয়া যায়। তবে আমের ব্যবসায়ীই প্রধান। উল্লেখ্য যে সদর উপজেলার যাদুপুর গ্রামের পান এই অঞ্চলের সেরা পান। অধিকাংশ পান ব্যবসায়ীই এই অঞ্চলের।

আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ,কারণ গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন ধরনের আমের গাছে ভরপুর থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি  আম উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট,নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হচ্ছে, ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাত, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম ।

ধর্ম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৯৮৭ টি মসজিদ, ৪৭৪ টি মন্দির, ৫৬ টি বৌদ্ধ মন্দির এবং ২৮ টি চার্চ আছে । ছোট সোনামসজিদ, চাঁপাই মসজিদ, ১৫শতকের দারসবাড়ী মসজিদ ইত্যাদি হচ্ছে বিখ্যাত মসজিদ । জোড়া মঠ হচ্ছে বৌদ্ধদের অন্যতম আশ্রম এবং নওদা স্তুপ হল বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাষা ও সংস্কৃতি

ভাষা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের (chapainawabganj) মানুষেরা বাংলাতে কথা বললেও তাদের উচ্চারণশৈলী প্রমিত বাংলা থেকে একটু আলাদা। তাদের কিছু শব্দের উচ্চারণ এখানে দেয়া হলঃ

অ্যাইগন্যা = উঠান, আইলস্যা = অলস, কাড়ি, আইড় = ধানের খড়, ইন্দারা/কুমহা = কুয়া, উফাদিক = উপাধিক/অকর্মন্য, উসকাঠী = রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি দন্ড যা দ্বারা জ্বালানী চুলার মধ্যে পাঠানো হয় (পাট গাছের কান্ড), কান্টা = বাড়ির পিছনের জায়গা, গঁঢ়্যা = ছোট ডোবা, ভূঁইশ = মহিষ, বল/আঁইড়্যা = ষাঁড় , বকরী = ছাগল, পাঘা = দড়ি , লাহি = নাভী, ঘুটা/নোন্দা = গরুর গোবর দিয়ে তৈরি এক প্রকার জ্বালানি, তহোমন = লুঙ্গী, সাঠা = এক ধরনের লাঠি, পির্হ্যান = পোষাক, ছুঁড়ি = কুমারী মেয়ে, ঘাঁটা = রাস্তা, গাঁটঠা/ বেহুদ্দা= বদমাইশ, ড্যারমা/মোটাহুস/হুসমোটা = কান্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি, নাথ = গরুর নাখের ভিতর ফুটো করে দড়ি হিসাবে যেটা দেয়া হয়, গোলদান= গরুর গলায় যে দড়ি পরানো থাকে, ছাইনচ্যা = টিনের চালা বেয়ে যেখানে পানি পড়ে, সলহি = গরুর গাড়ির জোয়ালের দুই ফুটোর মধ্যে দেয়ার জন্য কাঠের লম্বা দন্ড, ঢুঁইড়া = খোঁজ করা, সানকি = রান্না ঘরে ব্যবহারিত মাটির পাত্র, ছেঁচকি = তরকারী নাড়ার জন্য ব্যবহারিত লোহার দন্ড, ঢাকুন = ঢাকনা, ডই = ডাল নাড়ার জন্য কাঠের দন্ড, হাইস্যা = হাসুয়া, পাইহ্যা = চাকা, লদ্দি = নদী, পোখর = পুকুর, গোহিল = গোয়াল, আইল = জমির কিনারা, হ্যালা = সাঁতার কাটা, কোচ্চুল= চামচ, লেহেলি = লেপ, পঁহাত = সকাল, কান্ধা = কিনারা, আড়া/আইল = জমির সীমানা/আল, জাফত = দওয়াত, ন্যাংটা= উলঙ্গ, টাপিয়্যা = দৌড়ে, তাম্বাস= ভাত উঠানো চামচ , প্যাইচ্ছা = ডালি, গুড়ল বাতি/গুললতি = গুলতি,লাহার়ী=নাস্তা,খইলহ্যা=অলস, হামি=আমি, হাঁকে/হামাকে=আমাকে, হাঁরঘে=আমাদের, তাঁহিস -জ্বালা, হাঁরাকে= আমাদেরকে, পিন্ধা= পরা, দুপ্পহার= দুপুর, রায়িত= রাত, আইন্যা= এনে/আনিয়া দেয়া, কর‍্যা লে= করে নে, কহা= বল(বলা অর্থে), কহলি= বললি, কহিল্যা= বললা, কহিলেন= বলিলেন, কাইদ্যা= কাস্তে, স্যাকারগন= মিষ্টি আলু, বাগুন= বেগুন, ভুঁই= জমি, কুনঠেকার= কোথাকার, কুনঠে= কোথায়, কুমহার= কুমার, ছুথাইর‍্যা= অপরিচ্ছন্ন, অপরিষ্কার। লম্ভা= লম্বা, ছুটু= ছোট, বিসোইদব্যার= বৃহস্পতিবার, আঘুন= অগ্রহায়ণ, সোরিল= শরীর, গতর= গা,দেহ। রাম পটল= ঢেড়স, খুচপুইচ্যা= অস্থির, লেও= নাও।

সংস্কৃতি:

. নাট্যচর্চা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে (chapainawabganj) নাট্যচর্চা সংস্কৃতির অপরাপর ধারাগুলোর মত উৎকর্ষ লাভ করেনি। যতদূর জানা যায়, নবাবগঞ্জে সর্বপ্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মহারাজপুর গ্রামে। তারপর থেকে এখানে নাটক মঞ্চায়ন জনপ্রিয়তাও ব্যাপকতা লাভ করে। ১৮৯১ সালে নবাবগঞ্জে এক্সপ্রেস থিয়েটার নামে প্রথমবারের মত একটি নাট্যশালা গড়েওঠে। এটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় জমিদার ললিত মোহন মিত্র, গোপীমোহন সাহা, উমেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, শরৎ চ্যাটার্জিও পঞ্চানন সিংহ। ঐ সময়ের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা সৌরেশচন্দ্র মৌলিকের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় সৌরেশ নাট্যশালা। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় বহু হিন্দু ভারতে পাড়ি জমালে এখানকার নাট্যচর্চায় কিছুটা ভাটা পড়ে। অবশ্য কয়েক বছর পরেই জনৈক এহসান আলী খানের উদ্যোগে উদয়ন নাট্য সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংসদের কর্মকান্ডের ফলে নবাবগঞ্জের নাট্যচর্চায় গতি সঞ্চারিত হয়। ১৯৫২ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আল মামুন সানাউল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি স্থায়ী নাট্যমঞ্চ হিসেবে ‘টাউন হল’ স্থাপিত হয়। স্বাধীনতা লাভের পূর্বে আরো কিছু নাট্য সংগঠন গড়েওঠে। তন্মধ্যে ‘প্রগতি’ও ‘আর্ট কাউন্সিলে’র নাম উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত ‘সুপ্রভা’ও ‘থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী’ অদ্যাবধি নাট্যচর্চায় ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্প্রতিককালে জনতা নাট্যগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং সরকারিভাবে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে অনিয়মিতভাবে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।

. সংগীত
বিশ শতকের প্রথমার্ধেচাঁপাইনবাবগঞ্জে সংগীতচর্চার কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। কিন্তু ঘরে ঘরে সংগীতের চর্চা ঠিকই হত। সন্ধ্যার পর পথ বেয়ে চললে হারমোনিয়ামও বাঁয়া-তবলার শব্দ শোনা যেত বিভিন্ন ঘর থেকে। নববর্ষের ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানে দোকানে দোকানে জমে উঠত গানের আসর। ১৯৬০ সালের পরচাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক সংগীতচর্চা শুরু হয়। তখন দুটি প্রতিষ্ঠান সংগীতচর্চার মাধ্যম হিসেবে গড়েওঠে। প্রতিষ্ঠান দুটো হচ্ছে ‘বাণী বিতান’ও ‘সংগীত বিদ্যালয়’। শেখ লাল মোহাম্মদ বাণী বিতানও বাবু ক্ষীরোদ লাল রায় সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং শিক্ষক হিসেবে নবাবগঞ্জে সংগীতচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১-এ স্বাধীনতা লাভের পর দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে নবতর স্পন্দন শুরু হয় সে সময় নবাবগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার প্রভাব পড়ে। ১৯৭২ সালে ‘সংগীতা সংগীত নিকেতন’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে নবাবগঞ্জে স্বাধীনতা-উত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংগীতচর্চা শুরু হয়। বর্তমানেও এ প্রতিষ্ঠানটি তার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সংগীতা সংগীত নিকেতনের পরবর্তী সময়ে নবাবগঞ্জে অসংখ্য সংগীত বিদ্যালয় গড়েওঠে এবং জেলার সংগীতচর্চায় ভূমিকা পালন করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘উত্তরায়ন সাংস্কৃতিক পরিষদ’ (১৯৭৬), ‘সুরতরঙ্গ বিদ্যালয়’ (১৯৮৩), ‘মুক্তমহাদল’ (১৯৭৫), ‘সংলাপ’ (১৯৯০), ‘মহানন্দা সংগীত নিকেতন’ (১৯৮৮), ‘উদীচী’ (১৯৮৪), ‘থিয়েটার’ (১৯৭৮), ‘সুরছন্দ’, ‘স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী’ও ‘সারগাম’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীও শিশু একাডেমী শিশু-কিশোরদের সংগীতও নৃত্য প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।

. চিত্রকলা
চিত্রশিল্পে নবাবগঞ্জ পিছিয়ে থাকলেও এ জেলার কৃতী সন্তান রফিকুন্নবী (রনবী নামে পরিচিত) শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতিও সম্মান লাভ করেছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ‘টোকাই’র স্রষ্টা রনবী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর ‘টোকাই’ আজ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িতও অবহেলিত মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া নবাবগঞ্জের চিত্রশিল্পী খাইরুল আলম, শফিকুল আলম, হাবিবুর রহমান, তসিকুল ইসলাম বকুল, রাজা খান, এস. কে সাহা পিয়াস প্রমুখ শিল্পী হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন।

. লোকসংগীত
গম্ভীরাঃ গম্ভীরাচাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। নানা-নাতির কথোপকথন এবং সংগীতের মাধ্যমে সমাজের বিবিধ অসঙ্গতির সমালোচনা করা এ গানের বৈশিষ্ট্য। নানা-নাতি ছাড়াও বেশ কয়েকজন দোহার থাকেন। তারা হারমোনিয়াম, তবলা, জুড়ি ইত্যাদি বাজিয়ে থাকেন।

আলকাপঃ আলকাপ এক ধরনের হাস্যরসাত্মক লোকসঙ্গীত। বোনাকানা নামে জনৈক ব্যক্তি এ গানের উদ্ভাবন করেন। আলকাপ ছয়টি পর্বে বিভক্ত হয়ে পরিবেশিত হয়ে থাকে। পর্বগুলো হচ্ছে- জয়ধ্বনি, আসর বন্দনা, খ্যামটা, ফার্স, বন্দনা ছড়াও পালা। আলকাপে নারী চরিত্রে সাধারণত ছেলেরা রূপদান করে থাকে। তাদের ছোকরা বলা হয়ে থাকে। সারা রাত ধরে আলকাপ অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে আলকাপের চর্চা অনেকটা কমে গেছে।

মেয়েলি গীতঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়েলি গীতগুলো স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বিয়ে বাড়িতে গীত পরিবেশন এ এলাকায় একটি অপরিহার্য বিষয়। পানচিনি, আইলপোন, মেহেন্দিপাত, গায়ে হলুদ, থুবড়া খাওয়া, স্নান, বরানুগমন, বৌ-বিদায় প্রভৃতি অনুষ্ঠানে মেয়েলি গীত পরিবেশিত হয়ে থাকে। বিয়ের আনন্দের পাশাপাশি নারী জীবনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ-বেদনার কথা উপস্থাপিত হয়ে থাকে মেয়েলি গীতে।

গম্ভীরা

গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান। গম্ভীরা উৎসবের সঙ্গে এ সঙ্গীতের ব্যবহারের পেছনে জাতিগত ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ

রাজধানী শহরের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরাসরি যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের (chapainawabganj) সড়ক দূরত্ব ৩১৭ কিলোমিটার। ঢাকাস্থ গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কল্যানপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন অনেকগুলো পরিবহন সংস্থার অসংখ্য বাস ছেড়ে আসে। পক্ষান্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও ঐসব সংস্থার বাস নিয়মিত ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি এ সমস্ত পরিবহন সংস্থার যাত্রীবাহী বাস একঘন্টা/আধাঘন্টা অন্তর ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল করে। এ সবের বাইরে লতা, নাহার, সাথী, দূরদূরান্ত ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার বাসও প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করে।

বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে বিআরটিসিবাস ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল না করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নিয়মিতভাবে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর ও বরিশাল শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

রেলপথে ঢাকার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের (chapainawabganj) সরাসরি যোগাযোগ নেই। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে সিরাজগঞ্জ ও খুলনার উদ্দেশ্যে দুটি পৃথক ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।

জেলার অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থা

জেলা সদরের সঙ্গে আন্তঃউপজেলা যোগাযোগ মূলত সড়ক পথেই হয়ে থাকে। তবে নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা শহর ও জেলা সদরের মাঝে অসংখ্য বাস, ট্যাক্সি ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

  • মহানন্দা নদী
  • ছোট সোনা মসজিদ
  • ছোট সোনা মসজিদ পার্ক
  • তোহাখানা
  • শাহ নেয়ামতুল্লাহ এর মাজার
  • চামচিকা মসজিদ
  • দারাসবাড়ি মসজিদ
  • ধানিয়াচক মসজিদ
  • স্বপ্নপল্লী
  • নাচোল রাজবাড়ী
  • বাবুডাইং
  • রহনপুর নওদা বুরুজ
  • গোয়াইন বাধ ৭ টি*
  • নীলকুঠি
  • মহানন্দা নদী
  • শুড়লার তেঁতুল গাছ
  • স্বপ্ন পল্লী পার্ক
  • টাংঘন পিকনিক পার্ক
  • কানসাটের জমিদার বাড়ি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি ব্যক্তিত্ব

  • ইলা মিত্র- উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী।
  • প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ- বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
  • প্রফেসর মো.রফিকুন নবী (র’নবী)- আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস এর

সাবেক পরিচালক। লে.জে. (অব) ড. আমিনুল করিম।

  • আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ- বাংলাদেশের আলোকচিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ, আধুনিক ফটোগ্রাফীর জনক, একুশে পদক প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রাচার্য।
  • বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান শেলি- ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা/অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি, মহান ভাষা আন্দোলের বীর সৈনিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, গবেষক ও লেখক।
  • প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন- শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য(২০১৩-২০১৭)।
  • মমতাজউদদীন আহমদ- নাট্যকার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
  • ভাষা সৈনিক – এ্যাডভোকেট ওসমান গণি
  • রাজিত রহমান- (১৯৯২-২০১২)কানসাট আন্দোলনের প্রথম কবি

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

1 COMMENT

  1. Vai Khub chomotkar Vabe amader chapainawabganj somporke likhechen……….
    Apake Osongkkho dhonobad!
    Apner digho jobon kamona kori……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here