আলেকজান্ডার ক্যাসেল (alexander castle)
বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে, যা এখনও স্ব-মহিমায় নিজের অস্তিত্বকে জানান দেয়। প্রতিটি জেলার এসব ঐতিহাসিক স্থাপনা যেমন আমাদের দেশের সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ তেমনই পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। এই জেলায় রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। আর এসব স্থানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাচীন নিদর্শন হলো আলেকজান্ডার ক্যাসেল (alexander castle )।
মহারাজা সূর্যকান্তের আমলে স্থাপন করা হয় আলেকজান্ডার ক্যাসেল। ১৮৭৯ সালে মুক্তাগাছার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য সেসময়ের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের নামানুসারে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী তার বাগানবাড়ি শশীলজে নির্মাণ করেন এই কুঠিটি। কাঠ ও লোহার তৈরি এই বিলাস ভবনটি শহরের মধ্যেই অবস্থিত। সুদূর চীন দেশ থেকে চীনা কারিগর এনে এই ভবন তৈরি করেছিলেন এই জমিদার। ধারনা করা হয় এই কুঠির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল তখনকার টাকায় আনুমানিক ৪৫ হাজার টাকা।
আলেকজান্ডার ক্যাসেল (alexander castle) এর বেশীর ভাগ অবকাঠামোই কাঠ ও লোহার তৈরি। লোহার ব্যবহার বেশী থাকার কারণে লোকজন একে লোহার কুঠিও বলে ডাকে। সেই সময়ে লোহারকুঠির দ্বিতল ভবনের সিলিং অভ্র ও চুমকি ব্যবহার করে এটিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়। সুন্দর শিল্পকর্ম আর নান্দনিকতায় ভরপুর এই কুঠি।
কুঠির প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে দুটি মার্বেল পাথরের মূর্তি। লোহা-কুঠির চারপাশে ছিল বেশ কয়েকটি নারীর ভাস্কর্য। এখনও ভাঙ্গা অবস্থায় এই দু’টি ভাস্কর্য অতীতের স্মৃতিবহন করে চলছে। এছাড়া এর পেছনে রয়েছে ফুলের বাগান পাশে রয়েছে এক বিশাল পুকুর। বাগানবাড়িটিতে এখনও জমিদার আমলের সাক্ষী বহন করে চলছে নান্দনিক কারুকার্যময় দুটি ফোয়ারা। এছাড়া রয়েছে দীর্ঘ কৃত্রিম হ্রদ। যা দেখতে আজও আসেন অনেক দর্শনার্থীরা।
আলেকজান্ডার ক্যাসেল (alexander castle) এর রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। শহরের কেন্দ্রস্থরে কোর্ট-কাঁচারীর কাছে এটির অবস্থান। বহু বরেণ্য ব্যক্তি এই প্রাসাদে অবস্থান করেছেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরকালে আলেকজান্ডার ক্যাসলে চার দিন অবস্থান করেছিলেন। একই বছর মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন। এখানে আরো পদার্পণ করেছিলেন লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ।
বর্তমানে এই কুঠিটি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এ কুঠি যে জমিতে অবস্থিত সেখানে এখন ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ও সরকারী ল্যবরেটরি হাই স্কুল এর ভবন রয়েছে । এছাড়া সদ্য চালু হওয়া ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড ভবন ও এখানে। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ , মাধ্যমিক টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এই আধুনিক ভবনগুলো আলেকজান্ডার ক্যাসেল এর পরিবেশ অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
অনেকে এখানে বিকাল বেলা হাটাহাটি করেন। বাচ্চারা ক্যাসেলের সামনের মাঠে খেলাধুলা করে। পুকুরের পাড়ে বেঞ্চ গুলোতে বসেও নিরিবিলি কিছু সময় কাটানো যায় অনায়াসে। তাছাড়া এখানের পেছনের গেট দিয়ে বের হলে ব্রক্ষ্মপুত্র নদী , সার্কিট হাউস আর জয়নুল আবেদীন পার্ক আপনাকে মুগ্ধ করবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে অনেকগুলো বাস ছাড়ে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ হয়ে বাস যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘনতা। এসব বাসে ভাড়া পড়বে ১২০-১৩০ টাকা। এছাড়া ট্রেনেও ময়মনসিংহ যেতে পারবেন।ময়মনসিংহ নেমে অটো রিকশা করে সোজা চলে যেতে পারবেন আলেকজান্ডার ক্যাসলে। ভাড়া নিবে ২০-৩০ টাকা।
আলেকজান্ডার এর ক্যাসেল কিছু ছবি
বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।