পঞ্চগড় জেলার পরিচিতি

0
1594

পঞ্চগড় জেলা (panchagarh) বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা।

পঞ্চগড় জেলার পটভূমি

বহু আর্বতন ও বিবর্তনের মধ্যদিয়ে পঞ্চগড় (panchagarh) জেলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। পঞ্চগড় নামকরনেও রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে কেহ কেহ মনে করেন যে, এ অঞ্চলটি অতি প্রাচীনকালে ‘পুন্ডুনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’ (পাঁচ) গড়ের সমাহার ‘পঞ্চগড়’ নামটির অপভ্রাংশ ‘পঞ্চগড়’ দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের নাম যে, পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। বস্ত্ততঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ‘পঞ্চ’ শব্দটি বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটি, পঞ্চনগরী পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। সুতরাং পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হিসেবে প্রাকৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পঞ্চগড়ের নামকরনের সম্ভাবনা থকে যায়। অর্থ্যাৎ পঞ্চগৌড় > পঞ্চগোড়>পঞ্চগড়। অবশ্য বহুল প্রচলিত মত এই যে, এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই পঞ্চগড় (panchagarh) নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হচ্ছে, ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়।

পঞ্চগড় (panchagarh) একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন ও মধ্য যুগে এই ভূখন্ডের পাশেই ছিল মগধ, মিথিলা, গৌর, নেপাল, ভূটান, সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। আধুনিককালের মত অতীত কালেও জনপদটি ছিল সীমান্ত অঞ্চল। এই ভূখন্ডটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগ- জ্যোতিষ, কামরূপ, কামতা, কুচবিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা, বাদশা, সুবাদার এবং বৈকুন্ঠপুর অঙ্গ- রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূ-স্বামীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। খ্রীস্টীয় ২য়, ৩য় শতকের মধ্যে রাজা ‘শালিবাহন’ রাজা ‘পৃথু’ এবং রাজা ‘জল্লেশ’ পঞ্চগড়ের শালবাহান ও ভিতরগড় এলাকায় রাজ্য, নগর ও সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে তুলেছিলেন। মৌর্য, গুপ্ত ও পাল (দেবপাল ধর্মপাল) রাজন্যবর্গও এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন।

মধ্যযুগের শুরুতেই প্রথম মুসলিম বঙ্গবিজীয় সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন খলজি তাঁর বহু বিতর্কিত তিববত অভিযানের এক পর্যায়ে পঞ্চগড় জনপদের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সুলতান হোসেন শাহ এবং কামতার রাজা নীলধ্বজ তেঁতুলিয়া থানার দেবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কোন কোন ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন। সুলতান জালাল উদ্দিন ফাতেশাহ, সুলতান বারবক শাহ, শেরশাহ, খুররম খাঁ (শাহজাহান), মীরজুমলা, সুবাদার ইব্রাহীম খাঁ ফতে জঙ্গ এবং অন্ত মধ্যযুগে দেবী চৌধুরাণী, ভবানী পাঠক, ফকির মজনুশাহ প্রভৃতি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পঞ্চগড় জনপদের নাম ও স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত। ষোড়শ শতকে কুচবিহার রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় অঞ্চল মূলত কোচ রাজন্যবর্গের দ্বারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় (panchagarh) থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৮০ সালে ১লা জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫টি থানা তেতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। মহকুমার সদর দপ্তর পঞ্চগড় থানায় স্থাপিত হয়। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব সৈয়দ আব্দুর রশিদ (০১-০১-১৯৮০ থেকে ৩১-১২-১৯৮২)। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। পঞ্চগড় জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব আ.স.ম. আব্দুল হালিম (০১-০২-১৯৮৪ থেকে ১৬-০৬-১৯৮৫)।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

দেশের মোট ৪টি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড় (panchagarh) জেলা ছিল একটি। সীমান্ত পরিবেষ্টিত হওয়ায় ও ভৌগোলিক কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এ মুক্তাঞ্চলটি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে ও পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত পঞ্চগড় জেলা ৬নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সেক্টরটির বেসামরিক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম। অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, অ্যাড. কমরউদ্দিন আহমেদ (এমএলএ), অ্যাড. মোশারফ হোসেন চৌধুরী (এমএলএ), কাজী হাবিবর রহমান, আব্দুল জববার প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সেসময় এই এলাকায় ৭টি কোম্পানির অধীনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাহবুব আলম, মো. মতিয়ার রহমান, মো. তরিকুল ইসলাম, মো. মোকলেছার রহমান, মো. দুলাল হোসেন, আব্দুর রহমান এবং আব্দুল গণি। এ ছাড়া বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এর আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দীন আহমেদ।

১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পঞ্চগড় (panchagarh) দখল করে নেয় এবং পঞ্চগড় শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ২৮ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর বেশ জোরালোভাবে আক্রমণ করে। আক্রমণের পর ২৯ নভেম্বর মুক্ত হয় পঞ্চগড়।

পঞ্চগড় জেলারভৌগলিক পরিচিতি

২৬-২০ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৩৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত পঞ্চগড় (panchagarh) জেলার ভৌগলিক অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ । ১৯৪৭ সালে স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা অত্যন্ত আঁকাবাঁকা  ও ভংগুর। পঞ্চগড় জেলার তিন দিকেই ভারতীয় সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলার সাথে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য ২৮৬.৮৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুঁড়ি জেলা, উত্তর পূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতে পুর্নিয়া ও উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে ঠাকারগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত।

পঞ্চগড় জেলার তথ্যাবলী

আয়তন ১,৪০৪.৬৩ বর্গ কিঃমিঃ
ঊপজেলা
থানা
পৌরসভা
ইঊনিয়ন ৪৩
মৌজা ৪৬৩
জনসংখ্যা  ৯,৮৭,৬৪৪ জন (২০১১ সালের আদমশুমারী ও গৃহগণনা অনুযায়ী)

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

পঞ্চগড় জেলায় মোট পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। যথা:

  • আটোয়ারী উপজেলা,
  • তেতুলিয়া উপজেলা,
  • দেবীগঞ্জ উপজেলা,
  • পঞ্চগড় সদর উপজেলাও
  • বোদা উপজেলা।

পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইউনিয়নের নাম :

পঞ্চগড় সদর,চাকলাহাট, সাতমেড়া, অমরখানা, হাড়িভাষা, কাঃ কাজলদিঘি, ধাক্কামারা, গড়িনাবাড়ী, মাগুড়া, হাফিজাবাদ

তেতুলিয়া উপজেলার ইউনিয়নের নাম :

বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, তেঁতুলিয়া, শালবাহান, ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, দেবনগর

আটোয়ারী উপজেলার ইউনিয়নের নাম :

তোড়িয়া, আলোয়াখোওয়া, রাধানগর, ধামোর, মির্জাপুর, বলরামপুর

বোদা উপজেলার ইউনিয়নের নাম :

বেংহারি, ময়দানদিঘি, ঝলইশালশিরি, সাকোয়া, পাঁচপীর, বোদা, কাজলদিঘী, কালিয়াগঞ্জ, মাড়েয়া, বড়শশী, চন্দনবাড়ী

দেবীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের নাম :

দেবীগঞ্জ , সোনাহার, দন্ডপাল, শালডাংগা, টেপ্রীগঞ্জ, চিলাহাটি, সুন্দরদিঘী, পামুলী, দেবীডুবা, চেংঠি হাজরাডাঙ্গা

পঞ্চগড় জেলার ঐতিহ্য

পঞ্চগড় (panchagarh) জনপদে মানব বসতি শুরু হয়েছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে। বাংলাদেশের এই প্রান্ত অঞ্চলে দীর্ঘকাল ব্যাপ্ত পুন্ড্র, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসকগণের সংস্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য প্রত্ন নিদর্শন। এ সবের মধ্যেই রয়েগেছে অতীতের বহু গৌরব-গাঁথা বহু দীর্ঘশ্বাস ও প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের অগনিত স্মৃতি চিহ্ন। একটি শহরকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে উপাদান প্রয়োজন তার সবই বিদ্যমান রয়েছে পঞ্চগড় জেলায়। পঞ্চগড় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের যে কোন জেলার চেয়ে ভাল। পঞ্চগড়ের মানুষজন অতি সহজ সরল এবং অতিথি পরায়ন। পঞ্চগড় থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পর্যক্ষেণ করা যায় কাঞ্চনজংঘার অপরূপ দৃশ্য যা পর্যটকদের অতি সহজে আকৃষ্ট করে। পঞ্চগড়ে রয়েছে সমতল ভূমিতে চা বাগানের  আনন্দ সৌন্দর্য্য। রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম। রয়েছে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ডাকবাংলো যেখান থেকে দুই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

পঞ্চগড় জেলার ভাষা ও সংস্কৃতি

বর্তমানে পঞ্চগড় (panchagarh) অঞ্চলে প্রচলিত শব্দাবলী মূলত প্রাকৃত ও প্রাচীন বাংলারই সামান্য পরিবর্তিত রূপ।  পালি, প্রাকৃত, প্রাচীন মধ্য বাংলা এবং ব্রজবুলি- আসামী- হিন্দী- বিহারী ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ এই অঞ্চলে অধিক প্রচলিত। মুন্ডা ও সাঁওতালী ভাষার কয়েকটি শব্দ যেমন চাউলি, চুলা, জাইত, পাড়া, হাল, ডোঙ্গা, মেয়েছেলে, বেটাছেলে, মেয়েলোক ইত্যাদি এই অঞ্চলে প্রচলিত। স্বামী অর্থে ‘ভাতার’ বিবা অর্থে ‘বিহা’ যুবক যুবতি অর্থে ‘গাভুর’ বিধবা অর্থে ‘আড়ি’ বাউন্ডেলে অর্থে ‘বাউদিয়া’ স্ত্রী অর্থে ‘মাইয়া’ ঘর জামাই অর্থে ‘ডাঙ্গুয়া’ ব্যাথা অর্থে ‘বিষ’ ইত্যাদি শব্দগুলো পঞ্চগড়ের ভাষায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নজরুল পাঠাগারকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে সাংস্কৃতিক চর্চা গতিশীল হয়ে উঠে। অসংখ্য বই, মানচিত্র, বিশ্বকোষ, রচনাবলী ইত্যাদির সমৃদ্ধ সংগ্রহে এই পাঠাগারটি ছিল পঞ্চগড় (panchagarh) অঞ্চলের জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার এক অমূল্য তীর্থ ক্ষেত্র। মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাঠাগারের অনেক মূল্যবান বই ও এনসাইক্লোপিডিয়া জ্বালিয়ে দেয়।

পঞ্চগড় অঞ্চলে আঞ্চলিক ও লোকাল সংস্কৃতির মধ্যে ‘হুলির গান’ সর্বাধিক প্রচলিত ও জনপ্রিয়। হিন্দুদের হুলি পুজা থেকে হুলির গান নামটির উৎপত্তি হলেও সমসাময়িক ঘটনা বা অসংগতিপূর্ণ সামাজিক চিত্র, প্রেম কাহিনী ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেও ব্যাঙ্গাত্মক ও রসাত্মকভাবে এই গান পরিবেশিত হয়। সাধারণত শীতকালে রাতের বেলায় এ গান পরিবেশিত হয়। হুলি পালা শ্রেণীর গান। এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা থাকে ১০- ২০ জন পর্যন্ত। এই গানে যেমন রয়েছে নাটকীয়তা তেমনি আছে কাহিনীর ধারাবাহিক বিন্যাস। কাহিনীকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য একজন ছোকরা (মেয়ের সাজে ছেলে অভিনেতা) এবং একজন সং (জোকার) উপস্থিত থাকে। এরাই দর্শক ও শ্রোতার মনযোগ আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। হুলি পরিবেশনের সময় ঢোল, বাঁশি, কাসর, সারেঙ্গী ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র এবং বর্ণিল পোশাক ব্যবহৃত হয়।

পঞ্চগড় জেলার ব্যবসা বাণিজ্য

পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের সর্বউত্তরের প্রান্তে জেলা হলেও এ জেলায় প্রথম বৃহৎ শিল্পের প্রসার ঘটে ১৯৬৯ সালে পঞ্চগড় সুগার মিলস লি: প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পরবর্তীতে এ জেলায় কৃষি ভিত্তিক অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত তথ্য নিম্নরূপ :

পঞ্চগড় চিনিকল লিঃ:

পঞ্চগড় সুগার মিলস লি: ১৯৬৯ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১৯৮.৪৬ একর জমির উপর স্থাপিত হয়। মিলটি ১৯৬৯-৭০ সাল থেকে চিনি উতপাদন শুরু করে। মিলটির বাষির্ক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১০,১৬০ মেঃটন এবং দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ১,০১৬ মেঃটন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন এই মিলটি ১০০% মালিকানা সরকারের। বর্তমানে মিলটিতে ৮১০ জন জনবল কর্মরত আছে। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে মিলটিতে ৮,১৫৮.৬০ মেঃটন এবং ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ৪,১৫৮.৮৫ মেৰটন চিনি উৎপাদিত হয়।

জেমকন লিমিটেড :

পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন ধাক্কামারা নামক স্থানে জেমকন লিঃ এবং ভজনপুরে ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন লিঃ এর ২ টি বৈদু্তিক খুঁটি নির্মাণ কারখানা রয়েছে। জেমকন লিঃ ১৯৯৩ সালে এ জেলায় সর্বপ্রথথম বৈদু্তিক খুঁটি নির্মাণ শুরু করে। কারখানাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন ধাক্কামারা নামক স্থানে ৩৫.০০ একর জমির উপর স্থাপিত। পঞ্চগড়ে পাথর প্রাপ্তি সহজলভ্যতার কারণে এই অঞ্চলে বৈদু্তিক খুঁটি নির্মাণের কাচামাল স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে এই কারাখানাটিতে প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১,৫০০ জন লোক কর্মরত আছে।

জেমজুট লিমিটেড :

জেমজুট লিঃ ২০০৩ সালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলাধীন ময়দানদীঘি ইউনিয়নে মনিরাম জোত এলাকায় প্রায় ৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্মসঙস্থানের মাধ্যমেস্থানীয় জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনই হচ্ছে জেমজুটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জেমজুটে চটের কাপড় চটের ব্যাগ, দড়ি, সুতা, গুনচট ব্যাগ, কেনভাস ইত্যদি পণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। কোম্পানিটির প্রধান অফিস ঢাকায় অবস্থিত।

মার্শাল ডিস্টিলারী :

মার্শাল ডিস্টিলারী ১৯৯৪ সালে পঞ্চগড় সদর জেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নে স্থাপিত হয়। চিটাগুড় থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট ও ডিনেচার্ড স্পিরিট এ কারখানায় উৰপাদিত হয়। স্পিরিট উৎপাদনের কাচামাল সংগৃহীত হয় দেশীয় চিনিকলসমূহ হতে। এ কারখানায় বর্তমানে ৯৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত আছেন। মার্শাল ডিস্টিলারীর প্রধান কার্যালয় ৬১ কাকরাইল, রমনা, ঢাকায় অবস্থিত।

চা শিল্প :

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চা বোর্ডের একটিসমীক্ষা দল চা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসেপঞ্চগড় জেলায় আসেন এবং মাটি পরীক্ষা করতঃ অন্যান্য তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহকরেন। তাঁরা জানান পঞ্চগড় জেলায় প্রায় ৪০,০০০ একর জমি চা চাষের উপযোগীআছে। সে মোতাবেক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইসি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকেরযৌথ অর্থায়নে ৩.৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৪১ একর জমিতে চা চাষের লক্ষ্যমাত্রানিয়ে জানুয়ারি/২০০১-ডিসেম্বর/২০০৬ মেয়াদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরঅনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ চা বোর্ড দেশের উত্তরাঞ্চলে ’’ক্ষুদ্রায়তন চা চাষপ্রকল্প’’ শিরোনামে ১টি প্রকল্প গ্রহণ করে। পঞ্চগড় জেলার চা চাষ একটুভিন্ন প্রকৃতির অর্থাৎ শ্রীমঙ্গল, সিলেট ও চট্টগ্রামের মত খাস জমি পঞ্চগড়েনা থাকায় সমতল ভূমিতে অন্যান্য ফসলের মত যার যতটুকু চা চাষের জমি আছে, সেটুকু জমিতে চা চাষ করবে এবং প্রতি সপ্তাহে সবুজ চা পাতা ফ্যাক্টরীতেবিক্রী করবে। ২০০৬ সালের শেষে পঞ্চগড় জেলায় মোট চা আবাদ হয় ১,৬৮৯.৪৮ একরজমিতে।এরইধারাবাহিকতায় পঞ্চগড়ের সাথে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটজেলাকে যুক্ত করে ১০.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত প্রকল্পটিবর্ধিত করে। পরবর্তীতে ২য় পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পঞ্চগড়জেলায় যে সব জমিতে চা আবাদ হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশই পূর্বে অনাবাদি ছিল।পঞ্চগড়ে চা চাষের ফলে ৩,০০০-৪,০০০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলায় মোট চা চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ ২২৫৫.৫৪ একর। ২০০৯ সালে পঞ্চগড় জেলায় মোট ৬৫৬০২৪ কেজি মেড টি উৎপাদিত হয়েছে। চা চাষে উৎসাহিত করার জন্য ক্ষুদ্র চাষীদের (০-৫ একর) চারা প্রতি ১ টাকা হিসেবে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট ৯,৪৯,০০০/- টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় চা বোর্ডের সুপারিশক্রমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক চা চাষীদের মাঝে ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।

খনিজ সম্পদ

ভূ-বিজ্ঞানীদের চোখে বাংলাদেশ বিস্তৃত পলিমাটিতে ঢাকা এক ভূখন্ড যার উত্তর- পূর্ব, দক্ষিণ- পূর্ব, মধ্য-উত্তর এবং উত্তরাঞ্চলে  দেখা মেলে শক্ত প্রস্তরময় প্রাচীন ভূমির। পঞ্চগড় জেলা উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের ভূ- তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন জনপদ। টারসিয়ারী যুগে পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের বহু অংশই ডুবে গিয়েছিলো সমুদ্রের প্লাবন আর জলোচ্ছাসে। ফলে বৃহৎ বঙ্গের অনেকটা জায়গাজুড়েই পাওয়া যায় টারসিয়ারী যুগের সমুদ্রজাত পাললিক শিলাস্তর। পঞ্চগড় জেলা সংলগ্ন জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় টারসিয়ারী যুগের পাথর পাওয়া গেছে। এই সময়ের পাথরের মধ্যে রয়েছে বালি পাথর, চুনা পাথর, কাদা পাথর ইত্যাদি। এই ধরনের পাথর পাওয়া যায় পঞ্চগড় জেলার ভূ-ভাগে। বাংলার প্রাচীন জনপদসমূহে ভৌগলিক অবস্থিতি অনেকাংশে ভূ-প্রকৃতি এবং বিশেষ করে নদীর স্রোত দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার প্রধান পাহাড়ী নদী করতোয়া, ডাহুক, চাওয়াই, মহানন্দা, বর্ষাকালে দু’কুল প্লাবিত করে নিয়ে আসে পাথরের বালি ও নূরী পাথর। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ৫/৬ ফুট মাটির নিচেই পাথর  এবং পানিশাল কাঠের সন্ধান  পাওয়া যায়। পঞ্চগড় জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা পাথর উত্তোলনের উপর নির্ভরশীল।

পঞ্চগড় জেলায় মোট বালু মহালের সাংখ্যা ১৯টি, আয়তন ৮৭৩.৭৫ একর, পাথর মহাল ২০টি, আয়তন ১৬৫৬.০২ একর, ভাসা কাঠমহালের সংখ্যা ১২টি, আয়তন ১৫৭৮.০৫ একর।

নদ-নদী

পঞ্চগড় সদরঃ

করতোয়া,তালমা,চাওয়াই,পাঙ্গা,কুরুম,পাম

বোদাঃ

পাথরাজ, ঘোড়ামারা

দেবীগঞ্জঃ

মরা তিস্তা,আতরাই,ভূল্লী

আটোয়ারীঃ

নাগর,সিংগিয়া,বহু,রসেয়া

তেঁতুলিয়াঃ

মহানন্দা,ডাহুক,তিরনই,রনচন্ডি,বেরং,জ়োড়াপানি,সাও

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় আসার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম সড়ক পথ। রেলপথে আসতে হলে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে দিনাজপুর গামী আন্তনগর ট্রেনে উঠে দিনাজপুর স্টেশনে নেমে রিক্সা নিয়ে কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালে এসে পঞ্চগড় গামী গেইটলক বাস ধরে পঞ্চগড়ে আসা যাবে। বিমান পথে আসতে হলে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত বিমানে আসতে হবে তারপর বাস যোগে পঞ্চগড় আসা যাবে।ঢাকা থেকে সড়কপথে পঞ্চগড় আসতে হলে শ্যামলী, কলেজ গেইট অথবা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে পঞ্চগড় গামী দিবা কিংবা রাত্রিকালীন কোচ সার্ভিসের মাধ্যমে আসা যাবে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবহণের ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ার

পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

  • ভিতরগড়
  • মহারাজার দিঘী
  • বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
  • সমতল ভূমিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিতচা বাগান
  • মির্জাপুর শাহী মসজিদ
  • মির্জাপুর ইমামবাড়া
  • বার আউলিয়ার মাজার
  • গোলকধাম মন্দির
  • ছেপড়াঝাড় মসজিদ
  • তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো
  • তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার
  • বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর
  • রকস্ মিউজিয়াম
  • মহারাণী বাঁধ

বিঃদ্রঃ এখানে দেওয়া সকল তথ্য ইন্টারনেট এর বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো তথ্যে ভুল থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল টা সংশোধন করার জন্য আমাদের সাহায্য করবেন এবং এই তথ্য টি পরে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে তথ্যটি শেয়ার করবেন ।

তথ্যসূত্র:
স্থানীয় লোকজন
https://bn.wikipedia.org

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here